পালক পুত্রের ৩৪ কোটি টাকার সম্পদ : তোফায়েল আহমেদের ছায়াতলে উঠে আসা ‘বিপ্লব’ এখন পলাতক

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ (Tofail Ahmed)–এর পালক পুত্র মইনুল হোসেন বিপ্লব ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তির নামে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার সম্পদ চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission)। এর মধ্যে বৈধ উৎস ছাড়া ১২ কোটি টাকার বেশি সম্পদের প্রমাণ মিলেছে, যে কারণে বিপ্লব ও বিন্তির বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি।

ভোলার রাজনীতিতে এক সময়ের দাপুটে নেতা বিপ্লব মূলত তোফায়েলের বড় ভাই আলী আশরাফের ছেলে। নিজের সন্তান না থাকায় বিপ্লবকে ছোটবেলা থেকেই পালক পুত্র হিসেবে মানুষ করেন তোফায়েল। রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব আর ক্ষমতার বলয়ে আশ্রয়ে থেকে বিপ্লব হয়ে ওঠেন ভোলার শাসকপ্রায় এক চরিত্র—অভিযোগ রয়েছে, ত্যাগী নেতাদের পেছনে ফেলে তাকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়, যা নিয়ে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভও দানা বাঁধে।

বলা হয়ে থাকে, বিপ্লবের ইশারা ছাড়া তখন ভোলায় গাছের পাতাও নড়ত না। ঠিকাদারি, উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজি, নিয়ন্ত্রণ ছিল পৌরসভা থেকে এলজিইডি, গণপূর্ত, সব সরকারি দপ্তরে। এক সময় এই বিপ্লব হয়ে ওঠেন পুরো জেলার আতঙ্ক।

অন্যদিকে তার ভাই আলী আজম মুকুলকেও তোফায়েলের আশীর্বাদে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য করা হয়। তবে বর্তমানে তিনি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলায় কারাগারে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিপ্লব ৭৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বেশি আয়ের তথ্য দিয়েছেন আয়কর নথিতে। এর মধ্যে রেমিট্যান্স, মাছ চাষ, গাড়ি বিক্রি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে আয় দেখানো হয়েছে ২৯ কোটির বেশি। কিন্তু দুদকের তদন্তে এসব তথ্য ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। এই আয়ের বিপরীতে কোনো বৈধ দালিলিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি বিপ্লব দম্পতি।

রোববার ভোলা বিশেষ জজ আদালতে দাখিল হওয়া মামলার নথি অনুযায়ী, বিপ্লবের নামে ৪১টি দলিলে পাওয়া গেছে ১৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের জমি, ফ্ল্যাট ও ভবনের মালিকানা। বনানীতেই রয়েছে একটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ, ব্যাংকে স্থায়ী আমানত, শেয়ার ইত্যাদিতে মিলেছে আরও ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের প্রমাণ। মোট ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে তার বৈধ আয় হিসাবে দেখা যাচ্ছে ২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা—ফলে ১১ কোটির বেশি সম্পদের কোনো উৎস নেই।

তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তির নামে পাওয়া গেছে আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ। উল্লেখযোগ্য যে, তিনি সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের মেয়ে।

কমিশনের সহকারী পরিচালক খোন্দকার কামরুজ্জামান দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২০০৪ সালের ২৭ ধারার আওতায় এই দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও সম্পদের খোঁজ মিললে সেগুলোও তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

বর্তমানে বিপ্লব ও তার স্ত্রী আত্মগোপনে। তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর মন্তব্য করেন, “এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ আমলে ভোলায় চলা লুটপাটের একটা নমুনা মাত্র। বিপ্লবের যা প্রকাশ্যে এসেছে, আমার ধারণা—আসলে তার অনেক বেশি সম্পদ রয়েছে। সব দপ্তর ছিল তার নিয়ন্ত্রণে, আর এর সবকিছুর পেছনে ছিল তোফায়েল আহমেদ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *