হাইকোর্টে আওয়ামীপন্থি শতাধিক আইনজীবীর জামিন আবেদন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত হামলা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামীপন্থি শতাধিক আইনজীবীর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) হাইকোর্ট বেঞ্চ পাঁচ আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছে এবং আরও অন্তত ১৯টি জামিন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য রেখেছে, যেখানে আরও ৯০ জনের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই জামিন শুনানির সময় বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জামিন সংক্রান্ত একটি আবেদন নিষ্পত্তি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া এবং আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া

আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, “আমরা যে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেছি, তাতে হাইকোর্ট প্রথম ধাপে পাঁচজনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আরও ৯০ জনের জামিন সংক্রান্ত ১৯টি আবেদন বিচারাধীন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আগাম এবং অন্তর্বর্তী জামিনের বিষয়ও আছে।”

অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া বলেন, “আমরা জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেছি। এখন পর্যন্ত ১৫টি আবেদনের বিষয়ে আদেশ হয়েছে বলে জানি। তবে মোট আবেদন ও আসামির সংখ্যা কত, সেটি বলতে পারবেন আবেদনকারী পক্ষ।”

এর আগে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা আইনজীবী সমিতির অন্তত ৬৪ জন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। তবে আদেশের পর ৬১ জন আইনজীবীকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি তিনজন আত্মগোপনে থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখযোগ্যভাবে, আদালত বয়স বিবেচনায় সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর সহ ১৯ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। নারী আইনজীবীদের মধ্যে আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ, সাহেলা আক্তার শিল্পি, সালমা হাই টুনি, শারমিন সুলতানা হ্যাপী ও সুলতানা রাজিয়া রুমা সহ আরও ১৮ জন জামিন পেয়েছেন।

২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনের সময় সংঘটিত হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা অপর একটি মামলায় আট আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করলে, আদালত তা মঞ্জুর করেন। এসব মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সব আসামি আগে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা আবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে নতুন করে জামিন আবেদন করেন।

কোতোয়ালি থানার মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে আসামিরা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। তারা ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান এবং এক আইনজীবীকে হত্যাচেষ্টা করেন। অভিযুক্ত আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পরে পিস্তল তাক করে গুলি চালাতে যান, অন্যদিকে ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন।

মামলায় আরও বলা হয়, আসামিরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও মালামাল লুট করেন, প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং আইনজীবী সমিতির এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেন।

মামলাটি ৬ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করলে আদালত কোতোয়ালি থানা পুলিশকে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *