আইন, বিচার, সংসদ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এতদিন টিকে থাকতে পেরেছে মূলত ড. ইউনূসের নেতৃত্বের কারণে। অন্য কেউ নেতৃত্বে এলে হয়তো তা সম্ভব হতো না। একইসাথে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় গিয়ে সবচেয়ে বেশি সংস্কার করা দল হচ্ছে বিএনপি (BNP)।
নয়া দিগন্ত (Naya Diganta)-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ নজরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন প্রক্রিয়া এত দ্রুত হয়েছিল যে ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের চিন্তা করার সুযোগই ছিল না। তিনি বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর যেভাবে পরিস্থিতি বদলে যায়, সেক্ষেত্রে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী প্রধান করতে পারা ছিল সবচেয়ে বড় অর্জন।”
সংস্কার বনাম নির্বাচনের প্রশ্নে তিনি মনে করেন, উভয় প্রক্রিয়া পরস্পরকে শক্তিশালী করে। আসিফ নজরুল বলেন, “বিএনপিকে অনেকে সংস্কারবিমুখ বলে অভিযুক্ত করে, কিন্তু বাস্তবে তারা ৮০ শতাংশ সংস্কার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ সীমিত করার প্রশ্নে তিনি বলেন, বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদের সীমা নেই, আমেরিকাই কেবল ব্যতিক্রম। তাই শুধুমাত্র এই ইস্যুতে বিএনপিকে দায়ী করা উচিত নয়।
নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল জানান, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সরকার শতভাগ আশাবাদী। এই সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে প্রশ্নে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আইনি প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে যদি আদালত রায়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস বা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে, তখন সরকার বিবেচনায় নেবে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংস্কার বিষয়ক দ্বিমতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন ছাড়া অনেক আইনি সংস্কার করা সম্ভব, যেমন সিআরপিসি বা দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন। তবে সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন।
সরকারের কাজে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরের দলীয়করণের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে, যার ফলে কাজের গতি কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে সরকার তাদের সরিয়ে দিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনে সরকার ইতিমধ্যে ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ গঠন করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আলাদা অধিদপ্তর গঠনের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
জুলাই গণহত্যার বিচারের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, মে মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তা দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংবিধানের ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ কার্যকরের প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য থাকলে নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব।
৮ মাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে তিনি জানান, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৪ হাজার সরকারি উকিল নিয়োগ, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে পরিবর্তন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ নানামুখী সংস্কারকাজ হয়েছে। বিমান ভাড়া কমানো, প্রবাসীদের জন্য লোন ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সবশেষে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আল্লাহর রহমতে সারাদিন কাজ করছি, জনগণের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”