দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (ABM Khairul Haque) বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আত্মগোপনে রয়েছেন। জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যান এবং সেখান থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। প্রথমে ছিলেন তার মেয়ে ড. নায়লা হকের লন্ডনের বাসায়, পরে অবস্থান নেন ম্যানচেস্টারে। খায়রুল হকের এই পলায়ন এবং অতীত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘিরে দেশে আইনজীবী সমাজে ক্ষোভ চরমে উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, খায়রুল হক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন এবং শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তারা দাবি করেন, তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে বিচারব্যবস্থায় আর কেউ এমন অপকর্ম করতে না পারে।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দুটি থানায়। একটি ঢাকার শাহবাগ থানায়, অন্যটি নারায়ণগঞ্জের (Narayanganj) ফতুল্লায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। বাদী ছিলেন জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবদুল বারী ভূঁইয়া। মামলার পরও গ্রেপ্তার না হওয়া এবং দেশ ছেড়ে পালাতে পারা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
বিচার বিভাগের উচ্চপদে আসীন থাকাকালে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের আগাম জামিনের এখতিয়ার বাতিল, বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-কে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখা।
প্রধান বিচারপতির আসনে বসেই তিনি বিতর্কিত দুজন ব্যক্তিকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে শপথ পাঠ করান—একজন শাহ খসরুজ্জামান, যিনি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ; অন্যজন রুহুল কুদ্দুস বাবু, যিনি একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও খায়রুল হক তাদের শপথ পাঠ করাতে পিছপা হননি।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার পর শেখ হাসিনা তাঁকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেন। ২৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি অফিস করেন, এরপর ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল পরিস্থিতিতে আড়ালে চলে যান এবং ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি দেশেই ছিলেন, এরপর গোপনে দেশত্যাগ করেন।
এই মুহূর্তে তার অবস্থান যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে হলেও, তিনি জনসম্মুখে আসছেন না বলে জানা গেছে। মেয়ে ড. নায়লা হক লন্ডনের কিংস কলেজে গবেষক হিসেবে কর্মরত, আর ছেলে মো. আশিক উল হক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনিও ৫ আগস্টের পর থেকে দৃশ্যপট থেকে সরে আছেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা আরও বলেন, খায়রুল হকের বিচার নিশ্চিত না হলে দেশের বিচারব্যবস্থায় আস্থা ফিরবে না। তাকে বিচারের আওতায় আনতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হোক বলেও দাবি জানান তাঁরা।