নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত না আসায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)-এর নামে গেজেট প্রকাশ করতে হয়েছে। আজ বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ‘চতুর্থ কমিশন সভা’ শেষে কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা থাকায় তারা অপেক্ষা না করে গেজেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, “আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিলাম। ২৫ এপ্রিল ছিল ১০ম দিন, সেটা শুক্রবার হওয়ায় ছুটি ছিল। শনিবারও ছুটি ছিল, তাই আমরা ২৭ এপ্রিল, রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কোনো জবাব না পেয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে গেজেট প্রকাশ করি।”
এর আগে গত ২২ এপ্রিল নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পাওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেয় ইসি। তবে ২৭ এপ্রিলই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (Dhaka South City Corporation)-এর নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করে কমিশন। ফলে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা দেখভাল করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপস (Fazle Noor Taposh)-এর বিজয়ী ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। ওই মামলায় নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন সিইসি কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেনসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।
গেজেট প্রকাশের পরদিন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) প্রশ্ন তোলেন, কেন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের আগেই নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে গেজেট জারি করল। তিনি বলেন, “নির্বাচনী মামলায় প্লেইন্ট (আরজি) পরিবর্তন করা যায় না, কারণ এটা কোয়াশি সিভিল মেটার। আমরা জানতে পেরেছিলাম ইশরাক পরে প্লেইন্ট পরিবর্তন করেছিলেন। ফলে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি গেজেট হবে, নাকি আপিল করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেনি। ওনারা নিজেরা গেজেট প্রকাশ করেছেন। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত জানার আগেই তারা পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে।”
তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত প্রয়োজন না হলেও সংবেদনশীলতা বিবেচনায় তারা তা চেয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো জবাব না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে তারা নিজস্ব সিদ্ধান্তে গেজেট প্রকাশ করেন।
পেছনের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে উত্তরে আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে তাপস বিজয়ী হন। ফল প্রকাশ করে ২ ফেব্রুয়ারি গেজেট জারি করে ইসি। তাপস শপথ গ্রহণ করে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার দুই সিটির মেয়র পদসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়।
তাপস তখন প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন, আর ইশরাক পান প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ভোট। তবে আদালতের রায়ে ভোটের ফল বাতিল হওয়ায় এখন গেজেটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্বে ফিরছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন।