বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের ১৬ ধাপ উন্নতি

বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি যখন ক্রমশ অবনতির দিকে, ঠিক তখনই বাংলাদেশ কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে এগিয়ে গেছে ১৬ ধাপ। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (Reporters Without Borders) – আরএসএফ প্রকাশিত ২০২৫ সালের সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪৯তম। যদিও এই অগ্রগতিকে কিছুটা ইতিবাচক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, তবুও দেশের সাংবাদিকতা পরিস্থিতি এখনো ‘বেশ গুরুতর’ বলে মূল্যায়ন করেছে সংস্থাটি।

শুক্রবার, ২ মে প্রকাশিত এই বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৩৩.৭১। ২০২৪ সালে যেখানে ছিল ১৬৫তম, তার আগের বছর ১৬৩তম, সেখান থেকে এই উন্নয়ন ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে ১৫০-এর মধ্যে নিয়ে এসেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এই অবস্থান আরও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, প্রতিবেশী ভারত (India) আছে ১৫১তম এবং পাকিস্তান (Pakistan) ১৫৮তম স্থানে। এমনকি ভুটানও (১৫২তম) পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে। তবে অন্যদিকে, নেপাল (৯০তম), শ্রীলঙ্কা (১৩৯তম) ও মালদ্বীপ (১০৪তম) এখনও এগিয়ে রয়েছে।

এই সূচকের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে নরওয়ে (Norway) — টানা নবমবারের মতো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে যথাক্রমে এস্তোনিয়া ও নেদারল্যান্ডস।

অন্যদিকে, পশ্চিমা গণতন্ত্রের আদর্শচিত্র হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্র (United States) এবার আরও দুই ধাপ পিছিয়ে ৫৭তম অবস্থানে নেমে এসেছে। আশ্চর্যজনকভাবে, দেশটি এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিয়েরা লিওনেরও (৫৬তম) নিচে অবস্থান করছে। আরএসএফ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আশঙ্কাজনক অবনতি দেখা দিয়েছে। এমনকি এতে যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ প্রবণতার লক্ষণও স্পষ্ট হয়েছে।

চলতি বছরের রিপোর্টটি আরও উদ্বেগজনক এক চিত্র তুলে ধরেছে—বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশে সাংবাদিকতার পরিবেশ এখন ‘খারাপ’। আর মাত্র এক-চতুর্থাংশেরও কম দেশে পরিস্থিতি ‘সন্তোষজনক’ বলে বিবেচিত হয়েছে। আরএসএফ বলছে, সূচকের ২৩ বছরের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা।

বাংলাদেশের উন্নয়ন কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিলেও আরএসএফ-এর মূল্যায়ন স্পষ্ট করে দিয়েছে—এই উন্নয়নই যে সাংবাদিকদের নিরাপদ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, তা নয়। বরং একে তাত্ত্বিক অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *