৮ মাস পর প্রকাশ্যে আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি বেরোবি ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার পর প্রায় আট মাস আত্মগোপনে থাকার পর ফের অনলাইনে সক্রিয় হয়েছেন ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি পোমেল বড়ুয়া। তার এই হঠাৎ উপস্থিতি ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। তারা বলছেন, একজন ‘চিহ্নিত খুনি ও সন্ত্রাসী’ প্রকাশ্যে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছেন, অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ।

গত বছরের ১৬ জুলাই আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ, যা পরবর্তীতে স্বৈরাচার সরকার পতনের একপ্রকার প্রতীক হয়ে ওঠে। তবে সাঈদ হত্যার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। বরং বেশিরভাগ আসামি এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ১৬ জুলাইয়ের আগে পোমেল বড়ুয়া আবু সাঈদকে দুই দফায় মারধর করেন এবং সেদিনের হামলাগুলোর নেতৃত্ব দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলি চালানোর সময় পোমেল পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন। এরপর সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পোমেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর পোমেল পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যান এবং সেখান থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে তার একাধিক পোস্টে দেখা যাচ্ছে—তিনি এনসিপি, বিএনপি, জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কটাক্ষ এবং অপপ্রচার চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

এই হুমকি এবং গ্রেপ্তার না হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনের সক্রিয় সদস্যরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার বলেন, “সরকার পতনের পর রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের অনেকেই লাভবান হয়েছেন, কিন্তু যারা রাস্তায় আন্দোলন করেছিল, তাদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

রাসেল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “পুলিশ চাইলে যেকোনো আসামিকে মুহূর্তেই গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু পোমেল বড়ুয়ার ক্ষেত্রে কোনো তৎপরতা নেই, যা আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলেছে।”

এ বিষয়ে তাজহাট থানার ওসি আক্তারুজ্জামান জানান, আবু সাঈদ হত্যা মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ পিবিআই (PBI)-এর হাতে। তিনি বলেন, “আমাদের হাতে মামলা নেই, পিবিআই ভালো বলতে পারবে।”

সামাজিক মাধ্যমে পোমেলের সক্রিয়তা এবং তার অব্যাহত অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা দ্রুত তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন। তারা বলেন, “অন্যথায় এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতেই থাকবে এবং ভবিষ্যতেও কোনো শিক্ষার্থী নিরাপদ থাকবে না।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *