ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘স্বৈরাচার দল’ আখ্যা দিয়ে ফের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছে বিএনপি (BNP)। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) বলেন, “স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।”
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগ তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করেছে। এই রাজনৈতিক ‘অপরাধের’ জন্য দায়ীদের আগামী দিনের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি তুলে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকামী জনগণ জানতে চায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
অন্যদিকে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিএনপি তাদের ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠনের কথা বলছে। এই প্রস্তাব সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি এই কমিশনের আওতায় আসবে?
এই বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “রিকনসিলিয়েশনের সেরা নজির রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। কত হাজার মানুষকে সাজা দেওয়া সম্ভব? সেটা করতে গেলে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। বরং, সমঝোতার পথেই স্থায়ী সমাধান সম্ভব।”
তিনি ইঙ্গিত দেন, যেসব আওয়ামী লীগ নেতা সরাসরি অপরাধে যুক্ত ছিলেন না, তাদের জন্য হয়তো রাজনৈতিক পরিসর রাখা হতে পারে। আবার যারা পালিয়ে গেছেন, তারাও কি রিকনসিলিয়েশনের আওতায় পড়বেন—এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেন, “কারা সুযোগ পাবে, তা কমিশনের বিধিবিধানে নির্ধারিত থাকবে। বিএনপি চায় শান্তিপূর্ণ সমাধান ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থা।”
তবে কমিশনের কাঠামো বা বিধিবিধান এখনো প্রকাশ হয়নি। সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, “এখনই বিস্তারিত বলার সময় নয়। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, তখন সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো হবে। তখন ঠিক হবে, কমিশনের কাঠামো ও আওতা কী হবে।”
এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল (Asif Nazrul), যিনি বিএনপির ঘনিষ্ঠ আইন উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত, গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও রিকনসিলিয়েশন কমিশনের প্রস্তাব এসেছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে—এই উদ্যোগ কি আদতে আওয়ামী লীগকে ‘সাধারণ ক্ষমা’ দেওয়ার পথ তৈরি করছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ এক্ষেত্রেও সাবধানী বক্তব্য দেন। তার কথায়, “এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তখন সর্বমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখনই নির্ধারিত হবে কারা রিকনসিলিয়েশনের আওতায় পড়বে এবং কারা নয়।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপির এই কৌশলে একদিকে যেমন ‘দায়মুক্তি’র সম্ভাবনার কথা রয়েছে, তেমনি রয়েছে একটি নতুন শুরুর ইঙ্গিত। তবে, ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কেবল ‘নীতিগত অবস্থান’ হিসেবেই থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকেই।