কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী (Phulbari) উপজেলায় ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—বিয়ের রাতেই হারিয়ে গেলেন নববধূর স্বামী। ফুলশয্যার রাতে বিছানায় বসে বরের জন্য অপেক্ষায় থাকা লাভলী আক্তার (২১) চিরতরে হারান তার জীবনের সঙ্গীকে। বিয়ের কেবল কয়েক ঘণ্টার মাথায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বর খালেকুজ্জামান ডিউট। একদিকে বিয়ের আনন্দ, অন্যদিকে জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিদায়—এই দুই অনুভূতির চরম বিপরীত মূহূর্তের সাক্ষী হয়েছে একটি পরিবার।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলবাড়ীর কবিরমামুদ গ্রামের শাহ জামালের মেয়ে লাভলীর সঙ্গে শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের আছিয়ার বাজার এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে খালেকুজ্জামানের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এদিন দুই পরিবারের স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে ধুমধাম আয়োজনে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে। বরপক্ষের সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষে রাতের দিকে বিদায় নেন।
রাত ১২টা। নববধূ মেহেদী রাঙা হাতে, লাল শাড়িতে সজ্জিত হয়ে ফুলশয্যার ঘরে স্বামীর জন্য অপেক্ষায়। বর খালেকুজ্জামান আত্মীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে বাসর ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকেই নববধূর কাছে এক গ্লাস পানি চান। কিন্তু হঠাৎ করেই চিৎকার করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। নববধূর আতঙ্কিত চিৎকারে ছুটে আসে পরিবারের লোকজন। ততক্ষণে প্রাণ নেই খালেকুজ্জামানের। কেউ কিছু বোঝার আগেই ঘটে যায় চরম বিপর্যয়।
পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেন, তার মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আনন্দঘন এক রাত নিমিষেই পরিণত হয় শোকাবহ মুহূর্তে। নববধূ লাভলী আক্তার সেই রাতেই স্বামীর নিথর দেহের পাশে বসে কাটান, চোখে অশ্রু আর প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা।
লাভলীর চাচা, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহ আলম জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম বিয়ে করেছিলেন খালেকুজ্জামান। তার প্রথম স্ত্রী জান্নাতি আক্তার মুক্তার ঘরে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বৃহস্পতিবার লাভলীর সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। কিন্তু কারো কল্পনাতেও ছিল না যে বাসর রাতেই সব শেষ হয়ে যাবে। শাহ আলম বলেন, “অল্প বয়সে আমার ভাতিজি বিধবা হলো। এই দুঃখ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (Shimultari Union Parishad) চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম মিয়া শোহেল জানান, “এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা সত্যিই বিরল। নিয়তির ওপরে তো কারো হাত নেই। নববধূর এই অবস্থার কথা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে।”
শুক্রবার বিকেল ৩টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় খালেকুজ্জামানের। শেষ বিদায়ের সময় লাভলী চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। মেহেদী রাঙা হাতে, অশ্রু ভেজা চোখে স্বামীকে বিদায় জানান তিনি—এক এমন মুহূর্ত, যা কোনো নারী যেন জীবনে না দেখতে পান।