ভারতের হামলার জবাবে পাল্টা প্রতিরোধে সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিল পাকিস্তান

ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পাল্টা প্রতিরোধের পূর্ণ অনুমতি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি)। বুধবার অনুষ্ঠিত এই জরুরি বৈঠকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক প্রতিরোধী পদক্ষেপের প্রশংসাও করা হয়। খবর প্রকাশ করেছে জিও নিউজ (Geo News)।

মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং আজাদ জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে স্থল, নৌ ও আকাশপথে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ভারত। ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মাধ্যমে চালানো এই অভিযানে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি (Vikram Misri) দাবি করেছেন, পাকিস্তানে অন্তত ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল শরীফ আহমেদ চৌধুরী (Sharif Ahmed Chowdhury) এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহতের সংখ্যা ২৬। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদ, ঘরবাড়ি এবং বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে আত্মরক্ষার অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে এবং সেই অধিকার অনুযায়ী এখন থেকে পাকিস্তান সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত। এনএসসি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছে, শান্তি ও মর্যাদার প্রতি পাকিস্তানের অঙ্গীকার অটুট, তবে জনগণ এবং ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা কোনো আপস করবে না।

রাজনাথ সিংহ (Rajnath Singh) ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “অপারেশন সিঁদুর” নামে পরিচালিত এই অভিযানে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে এই আক্রমণ পরিচালিত হয়।

ভারত যে ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বাহাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহান আল্লাহ, মুরিদকের মারকাজ তৈয়বা, সরজল (তেহরা কালান), মেহমুনা জয়া সুবিধা (শিয়ালকোট), মারকাজ আহলে হাদীস বরনালা, ভিম্বার মারকাজ আব্বাস (কোটলী), মাসকার রাহিল শহীদ (কোটলী), মুজাফফরাবাদের শাওয়াই নালা ক্যাম্প এবং মারকাজ সৈয়দনা বিলাল-৩।

পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান, একটি ড্রোন এবং একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে হামলা-পাল্টা হামলার প্রেক্ষিতে সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি এবং মর্টার হামলার ঘটনা ঘটছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরে পেহেলগামে নিরীহ নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা এই সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ভারত সরকারের দাবি, তাদের হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং উত্তেজনাবিহীন। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি বলেও জানানো হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *