রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় আজ

দুই দশক আগে রাজধানীর রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের আনন্দঘন মুহূর্তে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর আজ (৮ মে) হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ (High Court Bench) আজ এ রায় দেবেন।

গত ৩০ এপ্রিল এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন একই বেঞ্চ। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে বহুল আলোচিত এই মামলার নিষ্পত্তি হতে চলেছে বলে আদালতপাড়ায় ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের আয়োজনে রমনা বটমূলে ভয়াবহ বোমা হামলায় ঘটনাস্থলে ৯ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও একজন নিহত হন। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন (Ruhul Amin) রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—মুফতি হান্নান (যার মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যে সিলেটের গ্রেনেড হামলা মামলায় কার্যকর হয়েছে), আকবর হোসেন, আরিফ হাসান, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।

এছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন—শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া এবং আবু তাহের।

ফৌজদারি মামলায় মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ নামে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডিতরা নিয়মিত আপিল ও জেল আপিলেরও সুযোগ পান।

২০১৪ সালে বিচারিক রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে নথিভুক্ত হয়। এরপর মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয় এবং ২০১৬ সালে প্রথমবার শুনানির জন্য ওঠে। তখন শুনানি শুরু হলেও পরে মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে। এরপর এই মামলা তিনটি আলাদা বেঞ্চে উঠলেও কোনো বেঞ্চই চূড়ান্ত রায় দেননি।

অবশেষে, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বর্তমান বেঞ্চ মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করে। ধারাবাহিক শুনানি শেষে আজ (৮ মে) এই বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায়কে ঘিরে নিহতদের পরিবার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ২২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজকের রায়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *