‘ডান হাত দিয়ে ডান গালে থাপ্পড়?’— এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নিয়ে আদালতে প্রশ্ন

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এটিএম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)-এর আপিল শুনানিতে বৃহস্পতিবার এক নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির (Shishir Monir) সাক্ষ্য নিয়ে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মামলার দুটি প্রধান সাক্ষীর বর্ণনায় বিরাট বৈপরীত্য রয়েছে—যা মামলার মৌলিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।

সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refaat Ahmed)-এর নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এই শুনানি শুরু হয় এবং ১১টার দিকে আদালত বিরতিতে যান।

শুনানিতে শিশির মনির আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রসিকিউশনের ১১ ও ১২ নম্বর সাক্ষী সাখাওয়াত হোসেন রাঙ্গা এবং তার ভাই সাজ্জাদ হোসেন একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ দিয়েছেন। রাঙ্গার বর্ণনায় বলা হয়েছে, আজহার ডান হাতে তার ডান গালে থাপ্পড় দেন—যা মানবশরীরের স্বাভাবিক গতিবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ নিয়ে শিশির মনির আদালতে প্রশ্ন তোলেন, “ডান হাতের থাপ্পড় কীভাবে ডান গালে পড়ে?”—একটি প্রশ্ন যা শুনানিতে গভীর অনুরণন তোলে।

তাছাড়া রাঙ্গা দাবি করেন, তিনি থাপ্পড়ে ছিটকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান, কিন্তু পরবর্তীতে বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় আজহার তাকে নির্যাতন করেন। শিশির মনির বলেন, “যদি কেউ অজ্ঞান থাকেন, তাহলে কীভাবে সেই নির্যাতনের কথা জানেন?” এ যুক্তির ভিত্তিতে তিনি বলেন, সাক্ষ্যটির স্ববিরোধিতা তাৎপর্যপূর্ণ।

অন্যদিকে, রাঙ্গার ভাই সাজ্জাদ আদালতে সাক্ষ্য দেন যে, আজহার ডান হাতে বাম গালে থাপ্পড় দেন। একই ঘটনায় দুই ভিন্ন বিবরণ উঠে আসায় শিশির মনির মন্তব্য করেন, “একটি গুরুতর মামলায় এমন অসঙ্গতিপূর্ণ সাক্ষ্য কি আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারে?”

আইনজীবী আরও বলেন, “ফৌজদারি মামলায় যদি যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ থাকে, তাহলে সাজা দেওয়া যায় না।” এই প্রসঙ্গে তিনি আদালতের সামনে বিভিন্ন মামলার নজির উপস্থাপন করেন এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার আত্মজীবনী ‘ব্রোকেন ড্রিম’ থেকে একটি অংশ তুলে ধরেন, যেখানে আইনি প্রক্রিয়ায় সুবিচার ও যথাযথ প্রমাণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

শিশির মনির শুনানিতে বলেন, “আমরা সময়ের প্রেক্ষাপটে আজ এই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। এটি সম্ভব হয়েছে ৫ আগস্টের পর দেশের পরিস্থিতির বদলে।” এ সময় তিনি এটিএম আজহারের পক্ষ থেকে আদালতে তার একটি বার্তা তুলে ধরেন: “আল্লাহর কাছে দোয়া করো, কারো কাছে বলার দরকার নেই।”

এই শুনানিতে আজহারের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ অভিযোগ নিয়ে আলোচনার সময় বলা হয়, এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে মূল রায় অনুযায়ী ২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে, যা ২০১৯ সালে আপিল বিভাগ বহাল রাখে। পরে ২০২০ সালে তিনি রিভিউ আবেদন করেন এবং ২০২৫ সালে তার পূর্ণাঙ্গ আপিল শুনানির সুযোগ মেলে।

এই আপিল শুনানি কেবল একটি রায়ের পর্যালোচনা নয়—এটি এক গভীর প্রশ্নের মুখোমুখি: একটি সাক্ষ্য কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য, যখন বাস্তবতা ও শারীরবিজ্ঞান উভয়ের বিরুদ্ধেই তার বর্ণনা দাঁড়িয়ে থাকে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *