সরকার পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন (Md. Jasim Uddin)-কে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায় এই পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও কে হবেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব—সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।
সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, জসীম উদ্দিনকে আর পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে রাখা হবে না—এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জার্মানির বার্লিনে জাতিসংঘ আয়োজিত শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন (Towhid Hossain)। তিনি দেশে ফিরলে আগামী সপ্তাহেই জসীম উদ্দিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হতে পারে।
২০২৩ সালের ৮ আগস্ট, ভারতে আশ্রিত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র অনুপস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের মাথায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপরই চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনকে নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জসীম উদ্দিনের বদল নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ও কূটনৈতিক মহলে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। বিষয়টি পরিণত হয় টোকিওতে বাংলাদেশ-জাপান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হওয়ার ঘটনার পর। ১৫ মে টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) নিয়ে সব প্রস্তুতি শেষ হলেও হঠাৎ করেই বাংলাদেশ পক্ষ থেকে বৈঠক স্থগিতের অনুরোধ জানানো হয়।
বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল সচিব জসীম উদ্দিনের। কিন্তু ১২ মে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জাপানকে নোট ভার্বাল পাঠিয়ে জানায়, বৈঠক আপাতত স্থগিত করা হোক। এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়ে দেয়, সচিব অনুপস্থিত থাকলে বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু এতে বৈঠক আর সচিব পর্যায়ের থাকছে না—এটি হবে প্রস্তুতিমূলক সভা।
পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় নেয় ১৩ মে দুপুরে, যখন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়—বৈঠক নির্ধারিত সময়েই হবে এবং সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম (Dr. Md. Nazrul Islam)। তিনি এরই মধ্যে একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে টোকিওর উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এফওসি বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চলতি মাসের শেষদিকে প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে যাচ্ছেন এবং এ সফর নিয়ে আলোচনাই হবে বৈঠকের মূল বিষয়।
জসীম উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এর মধ্যে তাকে কোনো অন্য দায়িত্বে রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও প্রকাশ হয়নি।
পেশাদার কূটনীতিকদের মধ্যে নতুন সচিব হিসেবে কয়েকটি নাম ঘুরছে, তবে কারও সারসংক্ষেপ এখনও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা পড়েনি বলে জানা গেছে।
জসীম উদ্দিন কূটনৈতিক ক্যারিয়ারে কাতার, গ্রিস ও চীনে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তা টোকিও, নয়াদিল্লি, ওয়াশিংটন ডিসি ও ইসলামাবাদে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় থাকাকালে দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৮ সালে কনস্যুলার পরিষেবার উন্নয়নের জন্য এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পুরস্কার লাভ করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন জসীম উদ্দিন।