আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর নতুন দুটি লক্ষ্য, দুর্নীতিতে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান

আওয়ামী লীগের (Awami League) সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলের নিবন্ধন স্থগিতের পর সরকার এখন দলটির বিরুদ্ধে আরও দুটি কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। প্রথম লক্ষ্য—দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে আসা। দ্বিতীয় লক্ষ্য—সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে যাওয়া।

সূত্রগুলো বলছে, এই দু’টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতের রাজনীতিতে পুনরুদ্ধার বা সংগঠিত হবার পথ চিরতরে রুদ্ধ করতেই এ উদ্যোগ।

ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission – ACC) আওয়ামী লীগের নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তদন্ত শুরু করেছে এবং এগুলো বাজেয়াপ্তের পদক্ষেপ নিচ্ছে। একইসঙ্গে দল নিষিদ্ধ হওয়ায় গ্রেপ্তার অভিযানের গতিও বেড়েছে।

সরকারি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও অভ্যুথানের সময় ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো উপায় ছিল না বলে দাবি করা হচ্ছে।

সরকারের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র বলছে, “আওয়ামী লীগ এখন দেশের মানুষের চোখে একটি ‘অপশক্তি’। দলের নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়ে দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন সরকারের সিদ্ধান্তকে সহায়তা করেছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
দল নিষিদ্ধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো বড় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া না এলেও ভারত (India) প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল (Randhir Jaiswal) বলেছেন, “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ছাড়া হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।” ভারতের এই অবস্থান বিবিসি বাংলা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে।

অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, “সন্ত্রাসী বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী, এখন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার আইনি ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। আগে শুধুমাত্র তালিকাভুক্তির সুযোগ ছিল, এখন পুরো সত্তাকেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব।”

এই আইনের ভিত্তিতেই সোমবার (১২ মে) জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে।” এর আওতায় আওয়ামী লীগের মিছিল, সভা-সমাবেশ, প্রচার, অনলাইন ও অফলাইন যেকোনো কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, “নির্বাহী আদেশে দল নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।”

আইনজীবী মহলের অনেকেই মনে করছেন, এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য, প্রচারণা, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমর্থনমূলক পোস্ট দেওয়া এখন আইনি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় নাগরিক পার্টির এক নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জনদাবি সরকার পূরণ করেছে মাত্র। এখন কেউ যদি তাদের পুনর্বাসনের কথা তোলে, জনগণ সেটা মেনে নেবে না।”

সবমিলিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—দল নিষিদ্ধ না করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাটাই কি কৌশলগতভাবে গ্রহণযোগ্য, না কি এটি ভবিষ্যতের আরও কঠোর পদক্ষেপের পূর্বাভাস?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *