নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (Selina Hayat Ivy)-কে গ্রেপ্তারে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৫২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১২ মে) রাতে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন এসআই রিপন মৃধা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল উদ্দিন জানান, ঘটনার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় মো. হানিফ (৫০), তার ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান (২১) এবং চাচাতো ভাই শওকত মিথুন (৩৬)-কে। তিনজনই শহীদনগর এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেপ্তার জিসানের চাচা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, “রাত পৌনে ১টার দিকে পুলিশ বাসায় ঢুকে কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি চালায়। পরে জিসান ও তার বাবাকে থানায় নিয়ে যায়। অথচ তারা দেওভোগ এলাকায় ছিলই না।” একই অভিযোগ জানিয়ে মিথুনের ভাই শাহাদাত হোসেন মামুন বলেন, “ঘটনার সময় মিথুন কুষ্টিয়া থেকে ফেরার পথে ছিল। পুলিশ তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল।”
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় তার সমর্থকরা বাধা দেন। সড়কে বালু ফেলে, বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে, এমনকি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে পুলিশকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন সকালে আইভীকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়ার সময় কালিরবাজার মোড়ে বাধা দেন সমর্থকরা। তারা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনার দিন, ৮ মে রাতে, নগরীর দেওভোগে আইভীর পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটির’-এ পুলিশ গেলে এলাকাবাসী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে বাধা দেয়। আইভী জানান, তিনি “রাতের আঁধারে” কোথাও যাবেন না। পরে সকালে তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়ার পথে বিক্ষিপ্ত হামলার শিকার হয় পুলিশের গাড়িবহর।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের ভাষ্যমতে, যুবদল (Jubo Dal) ও স্বেচ্ছাসেবক দল (Volunteer Wing)-এর নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে এবং সেসময় ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে। ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের মধ্যে তাদের একাধিক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে, যারা পরে আইভী ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে সড়কে মিছিলও করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের (Narayanganj Police) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তাসমিন আক্তার জানান, “পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সকালে সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের ওপর হামলা ও বাধাদানের অভিযোগে মামলাটি দায়ের হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে।”
এই পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party)-র দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী সমালোচনা করে বলেন, “৫ আগস্টের আগের মতো আবারও অজ্ঞাতনামা মামলায় গ্রেপ্তারের প্রবণতা শুরু হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ না থাকলে তাকে হয়রানি করা উচিত নয়।”
আইভী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশের এ ধরনের আইনগত পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে দাবি করছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হচ্ছেন নিরীহ পরিবারগুলো।