ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বহিরাগতদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন ছাত্রদলের শাহরিয়ার সাম্য (২৫)। তিনি ছিলেন ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
নিহতের খবর পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল) নেতাকর্মীরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব (Rakibul Islam Rakib), সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির (Nasir Uddin Nasir), ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস (Ganesh Chandra Roy Sahos) ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন (Nahiduzzaman Shipon)।
রাতের অন্ধকারে তারা জড়ো হন ঢামেক প্রাঙ্গণে, এরপর স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেন – “আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে”, “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে”, “ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, ভিসি-প্রক্টর কি করে?”। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে দেখামাত্র উত্তেজিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
সাম্যের হত্যাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে তার সাম্প্রতিক দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। একটি স্ট্যাটাসে তিনি আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, অপরটিতে প্রশ্ন তোলেন—“আজ যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, সেই একই দোষে ১৯৭১ সালের গণহত্যার সহযোগী জামায়াত ইসলামিকেও কি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়? আইন কি দুই জনের জন্য দুই রকম হবে?”
এই স্ট্যাটাসগুলো ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশপন্থী মতাদর্শের কারণে হত্যার শিকার হতে হয়েছে শাহরিয়ার সাম্যকে। এমনকি কেউ কেউ এটিকে আবরার হত্যাকান্ডের সাথেও তুলনা করছেন, কারন আবরার ফাহাদকেও জীবন দিতে হয়েছিল ফেসবুকের একটি ষ্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে।
ঢাবি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ভাষ্য, বারবার নিরাপত্তা শূন্যতায় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দাপট বেড়েছে, আর সেই শূন্যতার সুযোগেই খুন হয়েছে সাম্য। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে একজন ছাত্রনেতা খুন হওয়ার পরও উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল টিম কেন নিশ্চুপ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দাবি, প্রশাসন যেন এই হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকবেন তারা।
এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ও ক্ষোভ। অনেক শিক্ষার্থী, সাবেক ছাত্রদল কর্মী এবং সাধারণ জনগণ অনলাইনে একজোট হয়ে ‘ন্যায়বিচার চাই’ স্লোগানে সোচ্চার হচ্ছেন।
