জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিলের রায় ১ জুন—চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গন

রাজনৈতিক দল হিসেবে আবারও নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার আইনি লড়াইয়ে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) এর আপিলের রায় ঘোষণা হবে আগামী ১ জুন। নিবন্ধন না থাকলেও সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া দলটির ভবিষ্যৎ এই রায়ের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে।

বুধবার (১৪ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refaat Ahmed) এর নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। এর মাধ্যমে প্রায় এক দশক ধরে চলা একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক লড়াইয়ের নিষ্পত্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালো জামায়াত।

আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রবীণ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে, ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর, বাতিল হওয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফেরত পেতে জামায়াতের খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই আদেশের ফলে দলটি আবারও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ও নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার আইনি সুযোগ পায়।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট, একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় দলটি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। তবে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে শুনানির সময় প্রধান আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে তা খারিজ করে দেয়। এতে করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় কার্যকর থাকে।

তবে জামায়াত হাল ছাড়েনি। দলটি পুনরায় আপিল বিভাগের চেম্বারে আবেদন করে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। গত ১ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন শুনানির জন্য নির্ধারিত হয়।

জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পটভূমিতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ঘটেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ২০২৩ সালের ১ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) নেতৃত্বাধীন সরকার ইসলামী ছাত্রশিবির (Islami Chhatra Shibir) ও জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই সময় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সব অঙ্গসংগঠনসহ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে ২৮ আগস্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন হিসাব-নিকাশের সূচনা করে।

নিবন্ধন না থাকলেও জামায়াত দেশজুড়ে বিভিন্ন আন্দোলন ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছে, ফলে দলটির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ফিরে পাওয়া তাদের রাজনৈতিক শক্তিমত্তাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ১ জুনের রায় এ দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে উঠতে যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *