শাহরিয়ার আলম সাম্য (Shahriar Alam Samyo) হত্যাকাণ্ডে শোক ও ক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka)। শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) অর্ধদিবস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে গঠন করা হয়েছে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি।
বুধবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান (Prof. Dr. Niaz Ahmed Khan) এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “সাম্যর মতো একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থীকে এভাবে হারানো অত্যন্ত মর্মান্তিক।”
সাম্য হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের মোট সাতজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
এর আগে, বুধবার জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সাম্যর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য, ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মী, সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জানাজা শেষে সাম্যর মরদেহ সিরাজগঞ্জে নিজ গ্রামের উদ্দেশে পাঠানো হয়।
নিহত সাম্য সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) মধ্যরাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটে একটি তুচ্ছ দুর্ঘটনা ও কথাকাটাকাটির জেরে। সাম্যর মোটরসাইকেলের সঙ্গে একটি অপরিচিত মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাত সাড়ে বারোটায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই ক্যাম্পাসে শুরু হয় বিক্ষোভ। মঙ্গলবার রাতেই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করে ছাত্রদল। বুধবার সকালে শত শত শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের সামনে একত্রিত হয়ে বিচার দাবি করে।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনকে বুধবার আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। তবে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলম রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সাম্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে শোক ও ক্ষোভ মিলিয়ে উত্তাল পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার ও দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।