বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। শুক্রবার (১৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ফারাক্কা লংমার্চের ৫০ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল—‘ভারতের নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ করুন, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হোন’। এতে সাকি বলেন, “বর্তমান সংকটে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে রাজনৈতিক সমাধান দেওয়া। নিজেদের আন্দোলনকে ন্যায্য আর অন্যেরটা অন্যায্য মনে করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মবতন্ত্রের মাধ্যমে হামলা বন্ধ করুন। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দিন। বাংলাদেশকে যথাযথ রাজনৈতিক উত্তরণের পথে নিতে আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে নিজেদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন না।”
সাকি তার বক্তব্যে জাতির ইতিহাসে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা স্মরণ করে বলেন, “ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নদী ও প্রকৃতি রক্ষায় ভাসানীর অবস্থান আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলতেন, নদীর পানি শুধু মানুষের না, জীববৈচিত্র্যেরও অধিকার আছে তাতে।”
সাকি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ভারত একতরফাভাবে বাধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে রেখেছে, যা বাংলাদেশের প্রকৃতিকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। “ভারতের আগ্রাসী অবস্থান রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তাদের দাপট আমাদের ভাঙতে হবে, কূটনৈতিকভাবে নয়, জনগণের ঐক্যের শক্তিতে।”
তিনি আরও বলেন, “লোকদেখানো ভারতবিরোধিতা দিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা সম্ভব না। সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিন্ন নদীর পানি ও সীমান্ত ইস্যুগুলো তুলতে হবে।”
সাকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে হলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আনতে হবে—যা হবে জনগণের স্বার্থে, ক্ষমতাকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর জন্য নয়।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও সতর্কতা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “আমাদের আন্তর্জাতিক শক্তির চক্রান্ত মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য দরকার বৃহত্তর গণঐক্য। চট্টগ্রাম বন্দরসহ জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যুতে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নয়, সব পক্ষকে যুক্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া ও দীপক কুমার রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, সদস্য সচিব মাহবুব রতন, দক্ষিণের আহ্বায়ক আলীফ দেওয়ান, সদস্য সচিব সেলিমুজ্জামান এবং বাঞ্চারামপুর উপজেলার সংগঠক শামিম শিবলী।