দেশে রাজনীতিক ও সামরিক অঙ্গনে টানাপোড়েনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। জাতিকে সামনে কঠিন সময়ের ইঙ্গিত দিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার (General Waqar) এক ‘স্ট্যান্ডবাই’ বার্তার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, পরিস্থিতি যেকোনো সময় নাটকীয় মোড় নিতে পারে। এই বার্তা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইন্টারিম সরকার (Interim Government) ও সামরিক হাই কমান্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে।
গতকাল হঠাৎ করেই আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, অতীতে ভুক্তভোগী সেনাসদস্যদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে এবং সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়। তবে রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ছিল মূলত ‘নার্ভ কুলিং’ কৌশল। কারণ এখনই যদি কোনো সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা তৈরি হয়, তাহলে পুনর্বাসনপ্রাপ্তরাই হয়ে উঠতে পারেন বড় বাধা।
ঠিক একই সময়ে প্রতিটি ডিভিশনের জিওসি (GOC) দের কাছে পাঠানো হয় মাত্র চার লাইনের একটি সংক্ষিপ্ত এনক্রিপ্টেড বার্তা। বার্তায় জানানো হয়—মাত্র দুই মিনিটের স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় যেতে হবে এবং যেকোনো সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এটি ইঙ্গিত দেয়, পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিতে চলেছে।
এর পেছনে পটভূমি আরও জটিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ (Abdul Hamid)-এর দেশত্যাগ ঘিরে সরকার ও সামরিক হাই কমান্ডের দ্বন্দ্ব পৌঁছেছে চরমে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনুস (Dr. Yunus) সেনাপ্রধান ওয়াকারকে সরে যেতে বললেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, জেনারেল ওয়াকার নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেই ইউনুস সরকার তাঁকে আর ‘নিরাপদ’ মনে করছেন না। অপরদিকে সেনাপ্রধানের আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা এবং তাদের ‘সেইফ এক্সিট’ পরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে অনেকের দৃষ্টিতে বিতর্কিত করে তুলেছে।
এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। জুনিয়র অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে আওয়ামী রাজনীতির প্রভাব মুক্ত বাহিনীর দাবি জোরালো হচ্ছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার ঘনিষ্ঠ প্রায় ৫২ জন জেনারেল, ৫ জন মেজর জেনারেল এবং ২৫২ জন ব্রিগেডিয়ার থাকলেও এদের বড় অংশই বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণকারী হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষত মেজর জেনারেল এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের একটি বড় অংশ আওয়ামী ঘরানার ‘সুযোগভোগী’ হিসেবে বিবেচিত।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে, সেনাপ্রধান যদি তাঁর অবস্থান রক্ষা করতে চান, তাহলে তাঁকে অন্তত ১০০ জন জেনারেলকে বাড়ি পাঠাতে হবে, সব ডিভিশনের জিওসি দের ওএসডি করতে হবে এবং ব্যালেন্স অফ পাওয়ার ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় ‘সিপাহী বিপ্লব’ কড়া নাড়ছে বলে মত অনেকের।
ইতিহাসের দিকে তাকালেও, অনেকে বলছেন আগস্ট নয়, এই বিপ্লব এবার জুলাইয়ের আগেই হতে পারে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে ‘মানবিক করিডোর’ ইস্যু। যেখানে পররাষ্ট্র সচিব জসিমউদ্দীন (Jasim Uddin) বিরোধিতা করায় তাঁকে অপসারণ করে সরকার। অপরদিকে এই ইস্যুতে পশ্চিমা শক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থানের কারণে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান (Yunus-supporter) কে বরখাস্ত করতে চাইলেও, পশ্চিমা লবিং ও সরকারের হস্তক্ষেপে তিনি বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। এ ঘটনার পাল্টা হিসেবেই ইউনুস সরকার সেনাপ্রধানকে সরে যেতে বলেন, কিন্তু জেনারেল ওয়াকার তাতে রাজি হননি। বরং তিনি তার জিওসি দের স্ট্যান্ডবাই করে দেন এবং আমেরিকা সফরও বাতিল করেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র হচ্ছেন প্রবাসী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান (Khalilur Rahman)। অনেকের মতে, তার নিয়োগই ড. ইউনুসের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রমাণ।
ড. ইউনুসের বন্দর ও করিডোর ঘিরে অতিরিক্ত আগ্রহ এখন তাঁর বিরুদ্ধে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ, জাতীয় স্বার্থে মিলিটারি এক হয়ে গেলে জনসমর্থন নিয়েও তারা বড় পদক্ষেপে যেতে পারে—এমন আশঙ্কাই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজধানীর রাজনৈতিক ও সামরিক অঙ্গনে।
সাবধানবার্তা ইতোমধ্যেই উচ্চারিত—নিজেদের মধ্যে বিভাজন বন্ধ না হলে, ইতিহাসের চাকা আবারও এক অনিবার্য বিপ্লবের দিকে ঘুরে যেতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদ উন নবীর ফেসবুক পোষ্টের অনুসারে লেখা