“ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ নির্বাচন দিন, নইলে যমুনামুখী লংমার্চ হবে”—অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে হুঁশিয়ার করলেন সালাহউদ্দিন আহমদ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি (BNP)-র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। তিনি বলেন, “আপনি যদি ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চে নামবে।”

শনিবার (১৭ মে) খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন—ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজিত ‘তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আপনি বিশ্ববরেণ্য ও সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু সেই সম্মানের সঙ্গে যদি আপনি দেশে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পান, তাহলে সেই দায়িত্ব পালনেও আপনাকে যথাযথ আচরণ করতে হবে। আপনি বলেছিলেন নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হবে, এখন আপনি সরে দাঁড়াচ্ছেন।” তিনি যোগ করেন, “সংস্কার ও বিচার চলমান প্রক্রিয়া, এর অজুহাতে গণতন্ত্রকে দীর্ঘমেয়াদে আটকে রাখা যাবে না।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আপনার সরকারে এনসিপি মার্কা উপদেষ্টা রয়েছেন। তাঁরা একদিকে সরকারের উপদেষ্টা, আবার অন্যদিকে এনসিপির হয়ে রাজনীতি করেন। এটা ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা চান, তাঁদের পদত্যাগ করান বা বিদায় দিন।”

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, “আপনার সরকার একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছে। আমাদের সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা রিপোর্ট একজন বিদেশিকে দেওয়া হবে—এটা কেমন সিদ্ধান্ত? রোহিঙ্গা করিডরের নামে এই উপদেষ্টা বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়।” তিনি কড়া ভাষায় বলেন, “এই ষড়যন্ত্র আমরা হতে দেব না। এই উপদেষ্টাকে অবিলম্বে বিদায় দিন।”

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে এক খুনের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১,৪০০ মানুষকে সামরিক অস্ত্রে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দল অনুশোচনা তো দূরের কথা, দিল্লিতে বসে আন্দোলনকারীদের অপরাধী বলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের ইতিহাস একদলীয় শাসন ও গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। ২০২৪ সালের গণহত্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।”

সরকারের বন্দরের ওপর ‘অবাধ’ কর্তৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। “ইউনূস সরকারের অধীনে বন্দর, করিডর—সব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কোন চুক্তিতে, কী এখতিয়ারে, কাদের অনুমতিতে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?”

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আপনার একমাত্র দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োগ বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার এখতিয়ার নয়।”

এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *