সাম্য হত্যার বিচারে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা, ঢাবিতে উত্তাল ছাত্র রাজনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারে গতি না থাকায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের গ্রেপ্তার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল (Chhatra Dal)।

বুধবার, সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ঢাবি’র প্রক্টর অফিস ঘিরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। তারা দাবি করে, তদন্তে অবহেলা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতায় প্রক্টরসহ উপাচার্যের পদত্যাগ প্রয়োজন।

ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে মূল ঘাতকদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ২৩ মে সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

এদিকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ছাত্রদল ও বামধারার সংগঠনের নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা বলেন, গত ৯ মাসে দুটি হত্যাকাণ্ড হলেও প্রশাসন ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেনি। উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে তারা নানা স্লোগান দেয়— “আর চাই না, আর চাই না এন‌এস‌আইয়ের প্রক্টর,” “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে,” “ক্যাম্পাসে লাশ ঝুলে, প্রক্টর কী করে?”

সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবির পাশাপাশি এসব স্লোগানে উঠে আসে একটি হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজের প্রতিচ্ছবি।

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে অনশন

সাম্য হত্যার বিচার ছাড়াও ঢাবির রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। তিন দফা দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদ (Student Rights Council) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। বুধবার দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া এই অনশনের মূল দাবি— সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার, ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন ও রোডম্যাপ ঘোষণা, এবং ঢাবি ও আশপাশ এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন।

ইয়ামিন বলেন, “১৫ মে’র মধ্যে ডাকসু কমিশন গঠনের কথা ছিল, অথচ কোনো অগ্রগতি নেই। প্রশাসন চাইছে না নির্বাচন হোক। একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বন্ধে সক্রিয়।” তিনি আরও জানান, “রোডম্যাপ না দেয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্যর বাবা মো. ফকরুল আলম বুধবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাম্য হত্যায় জড়িত সন্দেহে সোমবার (২০ মে) রাতে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারে আনতে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। প্রশাসনের পদক্ষেপে সাম্যর পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলেও জানানো হয়।

উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের জন্য কাজ করছে। আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে চাই।”

এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু নয়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক জবাবদিহির বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। ছাত্ররাজনীতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা—সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে ক্যাম্পাসের রাজপথ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *