আদালতের রায় বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর বুকে গণআন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)। বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যার পর থেকে হাজারো জনতার ঢল নেমেছে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে। হেয়ার রোড, কাকরাইল, মৎস্য ভবনের মোড়—সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে, বাতাসে এখন শুধুই একটি স্লোগান: “ন্যায়বিচার চাই, অন্যায় সহ্য নয়।”
সাবেক মেয়র প্রার্থী হিসেবে আদালতের রায়ে জয়ী হলেও এখনও শপথ নিতে পারেননি ইশরাক। এই চরম অসাম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসা তার এবং তার অনুসারীদের আন্দোলন এখন আর শুধু একটি পদ-পদবি কেন্দ্রিক দাবি নয়, এটি রূপ নিয়েছে ন্যায়ের পক্ষে এক দুর্বার গণজাগরণে।
যমুনার সামনে দাঁড়িয়ে ইশরাক বলেন, “এই আন্দোলন আমার একার জন্য নয়, এটি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ঘরে ফিরবো না, যতোক্ষণ না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। আদালতের রায় মানা না হলে দেশের মানুষ কার উপর আস্থা রাখবে?”
ইশরাকের দাবির পক্ষে যুক্তি আরও দৃঢ়; তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও আদালত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। অথচ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টারা নিজের মতামত দিয়ে আদালতের রায়কে অগ্রাহ্য করছেন। এটি শুধু বেআইনি নয়, এটি জনগণের রায়ের ওপর সরাসরি আঘাত।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, আসিফ মাহমুদ (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan) ও মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam) নামে দুই উপদেষ্টা সরকারি পদে থেকেও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা পালন করছেন। ইশরাক বলেন, “সরকারি পদে থেকে যদি দলীয় রাজনীতি করেন, তাহলে আপনাদের সেই পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।”
রাজনৈতিক চেতনাকে কেন্দ্র করে এমন সরব উপস্থিতি অনেকদিন পর দেখা গেল রাজধানীর রাজপথে। ইশরাক বলেন, “আমরা বিএনপি—কোটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। কোনো কুচক্রী মহল আমাদের রুখে দিতে পারবে না। আজ আমরা এখানে যমুনার সামনে দাঁড়িয়ে, কাল দাঁড়াবো অন্যায়ের প্রতিটি দুয়ারে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই, সব রাজনৈতিক দল যাতে সহাবস্থানে টিকে থাকতে পারে। আর সে জন্যই আমাদের এই সংগ্রাম। আমাদের দাবি—আদালতের রায় বাস্তবায়ন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।”
ইশরাকের ভাষণ ও নেতৃত্বে উৎসাহিত হাজারো নেতাকর্মী সন্ধ্যার পর থেকে যমুনার সামনে অবস্থান করছেন। তাদের চোখে মুখে দৃঢ় প্রত্যয়—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
এই প্রতিবাদ প্রমাণ করেছে, একটি ন্যায়সংগত দাবির পক্ষে জনতার শক্তি কখনো নিঃসার হয় না। ইশরাক হোসেন যেন হয়ে উঠেছেন সেই সংগ্রামী প্রতিচ্ছবি, যিনি আইনের শাসনের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন।