‘জুলাই বিপ্লব’ থেকে অনৈক্যের হতাশা: এনসিপি নেতা মাহিন সরকার – আব্দুল কাদেরের বিস্ফোরক ফেসবুক স্ট্যাটাস

‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত গণআন্দোলনের ভেতরের টানাপোড়েন, নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আড়ালে থেকে যাওয়া ত্যাগীদের উপেক্ষার অভিযোগ তুলে বিস্ফোরক এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাহিন সরকার (Mahin Sarkar), জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizen Party – NCP) যুগ্ম সদস্য সচিব। ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া তার বক্তব্যে উঠে এসেছে আন্দোলনের শুরুর প্রেক্ষাপট, নেতৃত্বের বৈপরীত্য, এবং নিজের ব্যক্তিগত বিসর্জনের করুণ বর্ণনা।

স্ট্যাটাসে মাহিন সরাসরি বলেন, “ঠিক করেননি ভাইয়েরা। ঠিক করেননি।” তিনি অভিযোগ করেন, জুলাইয়ে ‘আল্লাহর নামে’ শুরু হওয়া সেই আন্দোলনের শুরুতে সারাদেশের মানুষ শুধু একটি ডাকের অপেক্ষায় ছিলো। “২৮ জুলাই থেকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামে,” লিখেন তিনি। অথচ সেই মোহময় মুহূর্তেই, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থানের সময়, দলে ভেতর থেকে আসে অনলাইনে একদফা কর্মসূচি ঘোষণার চাপ। মাহিন বিদ্রুপ করে লেখেন, “হাহা!”

তিনি জানান, সেদিনই বুঝে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র পতন ‘প্রায় নিশ্চিত’। সেই আনন্দের আবহেই আসে রাজনৈতিক অফার—দেশের বাইরে থেকে এক ‘মারদাঙ্গা সাংবাদিক’ তাকে মন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। মাহিন তা প্রত্যাখ্যান করেন।

স্ট্যাটাসে ফিরে আসে তার অতীত লড়াইয়ের কথা। কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় ছাত্রলীগের দপ্তরে ঢুকে ঢুকে স্লোগান দেওয়া, কলা টানা, পানি বহন, ক্রাউড ফান্ডিং—সবকিছুতেই সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানান মাহিন। “রক্ত-ঘামে একাকার ছিলাম,” মন্তব্য করেন তিনি। অথচ এতকিছুর পরেও ৫ আগস্টের পর থেকে তাকে কার্যত ‘নাই’ করে দেওয়া হয়।

তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “পলিসি লেভেলে তো রাখতে পারতেন! রাখলেন না কারণ ক্যালিবার নাই রাজনীতির।” অভিযোগ তোলেন, ‘বিপ্লবী’ বলে দূরে ঠেলে রাখা হয়েছে। ডিএসইউ নির্বাচন নিয়েও খোঁচা দিয়ে বলেন, “ডাকসু করলে সব যাবে আপনাদের, থামিয়ে দিলেন।”

মাহিনের ভাষায়, এই ‘কোরামবাজি’ই ঐক্য বিনষ্ট করেছে। “জুলাইয়ের সকল সন্তানকে এই মাশুল দিতে হবে,” বলেন তিনি। তবে তিনি মনোবল হারাননি বলেই দাবি করেন, “পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিনি, আর করবো না ইনশাআল্লাহ।”

এই আবেগময় স্ট্যাটাসের পাশাপাশি, আরেক নেতা আব্দুল কাদের (Abdul Qader) লিখেছেন, “জুলাইয়ে জীবন বাজি রেখে আমরা কয়েকজন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম।” কাদের দাবি করেন, আন্দোলন পরবর্তীতে সিনিয়র নেতারা দায়িত্ব নিলেও, তাদের একপ্রকার ‘নাই’ করে দেওয়া হয়েছে। “সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিয়েছি,” বলেও তিনি অভিযোগ করেন, “আপনারা নিজের মতো করে সব চালাচ্ছেন।”

তিনি অভিযোগ করেন, পলিসি মেকিং বা দলে মতামতের স্পেস পাননি তারা। বরং, ব্যক্তিগত আবেগে চালিত হয়ে দলীয় ভ্রাতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছেন সিনিয়ররা। কাদের লেখেন, “সকল সম্ভাবনাকে গলাটিপে হত্যা করেছেন।”

শেষে দুই নেতাই আক্ষেপ করে বলেন, জাতির ভবিষ্যৎ কোনো ব্যক্তির ইচ্ছামাফিক চলতে পারে না। তারা বলেন, “এখনই বিহিত করতে হবে—Now or Never!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *