জুলাই বিপ্লবে সেনাবাহিনীর অবদানকে পিনাকী-ফরহাদ গং মুছে দিতে চেয়েছিল

জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন খোমেনী ইহসান (Khomene Ehsan), যিনি জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত। এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি সেনাবাহিনীকে ‘দারোয়ান’ বানানোর চেষ্টার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সবাইকে হিস্যা দিন, সবাইকেই স্মরণ করিয়ে দেই—জুলাই বিপ্লব ছাত্র, জনতা আর সেনাদের মিলিত বিপ্লব ছিল।”

ইহসান অভিযোগ করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারকে বাদ দেওয়ার অপপ্রচারের মাধ্যমেই জুলাই বিপ্লবকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ষড়যন্ত্রে তিনি পিনাকী, ফরহাদ ও ছোটন গংকে দায়ী করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও এবং সেনাপ্রধানকে টার্গেট করাকে ‘বিপ্লববিরোধী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।

তিনি আরও দাবি করেন, সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি গং ও নুরুল হক নূর (Nurul Haque Nur) এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, এবং এই সময় হাসনাত আবদুল্লাহর মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী পক্ষ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের পতনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইহসান দাবি করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) তখন সেনাকর্তৃপক্ষকে ফোন করলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

তিনি বলেন, “ড. ইউনূস পরিস্থিতি শান্ত করেন বিএনপির মাধ্যমে, কিন্তু তারপরও সেনাবাহিনীকে পরিবর্তনের শরিক বানাতে চেষ্টার অভাব ছিল। বরং সরকার পুরো সেনাবাহিনীকে অবমূল্যায়ন করেছে, ‘দারোয়ান ট্রিটমেন্ট’ দিয়েছে।”

এই প্রেক্ষিতে ইহসান উল্লেখ করেন, ৪ জানুয়ারির অভিষেক কর্মসূচিতে জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়া চারজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, যাঁদের উপস্থিতিতে হামলার শিকার হয় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। তিনি এ হামলার জন্য সরাসরি সারজিস আলমকে দায়ী করেন এবং নাহিদ ইসলামকে সঙ্গে সঙ্গেই প্রমাণ প্রদান করার কথাও জানান।

অভিযোগ আরও বিস্তৃত করে ইহসান দাবি করেন, সরকারবিরোধী নতুন দলগুলোর নেতৃত্ব হাসিনা রেজিমের অপপ্রচারে যুক্ত হয়েছে এবং পরে সেই নেতারাই জামায়াতবিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে। পরিণতিতে, তারা সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের প্রস্তাব বঙ্গভবনে পাঠায়—যা এসেছে ড. ইউনূসের অফিস থেকেই।

তবে সেনাবাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান সেনাপ্রধানের পক্ষে দাঁড়ায়, বিশেষত বিএনপি ও জামায়াতঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা তাকে সমর্থন দেন। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দীনের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের উপস্থিতিকে ইহসান ‘বিশেষ বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইহসান। তিনি বলেন, “এ সরকার একেবারেই অবৈধ। এটি কেবল সোশাল কন্ট্রাক্টের ওপর টিকে আছে।” তিনি মনে করেন, সরকার টিকিয়ে রাখতে হলে সেনাপ্রধানকে পাশে রাখা এবং রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে সরিয়ে ফেলা দরকার ছিল। ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি রাজি হননি, ফলে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতির পদে বসানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তবে কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।

পোস্টের শেষাংশে ইহসান মন্তব্য করেন, “৫ আগস্টের আগে কেউ বিপ্লবের ঘোষণা দেয়নি, আমিই প্রথম বলেছি। পরে অনেকেই নিজেদের বিপ্লবী সাজালেও, আসলে তারা সাংবিধানিকভাবে সরকারে শপথ নিয়ে বিপ্লবী নাম ধারণ করেছে—এটা চালাকি ছাড়া কিছু নয়।”

তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন একটি গোষ্ঠী বা দল হিসেবে কাজ করছে, যা সরকার নয়। সবার বাইরে সবাইকে মাইনাস করতে গিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করে ধরা খেয়েছে। ফলে ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

শেষে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, “বিপ্লবের ঐক্য যদি চাই, তবে সবাইকে হিস্যা দিতে হবে। সেনাবাহিনী কিংবা জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ—কাউকে বাদ দিয়ে নয়।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *