প্রভাব বিস্তার নিয়ে সমন্বয়কের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আ’-হ’-ত ৩

কুড়িগ্রামের রৌমারী (Roumari) উপজেলায় প্রভাব বিস্তার ও প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement) নামক একটি ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে রক্তাক্ত হলো তিন সমন্বয়ক। বৃহস্পতিবার (২২ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই উত্তপ্ত সংঘর্ষে আহত হন সংগঠনের তিন প্রভাবশালী সদস্য—সাজেদুল ইসলাম সবুজ (Sazedul Islam Sabuj), মেহেদী হাসান রনি (Mehedi Hasan Roni) এবং রশিদুজ্জামান রাফি।

সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের সূচনা হয় একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। সংগঠনটির জেলা সমন্বয়ক সাজেদুল ইসলাম সবুজ বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি নোটিশ পোস্ট করেন, যেখানে রৌমারীতে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে শহীদ মিনার চত্বরে মতবিনিময়ের জন্য জড়ো হন সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা। সেখানে সবুজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্প ‘হাতিয়ে নেওয়ার’ অভিযোগ তুলে মুখোমুখি হয় আরেকটি গ্রুপ।

প্রথমে বাগবিতণ্ডা শুরু হলেও পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে তিনজন গুরুতর আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আহত রশিদুজ্জামান রাফি জানান, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রভাব খাটিয়ে কাবিখা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করছেন। ছয়টি ইউনিয়নে সাত লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার কিছু অংশ ইতোমধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ বাস্তবে কোনো কাজই হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যারা নিজের পকেট ভারী করছেন, তাদেরকে কি আমরা ছেড়ে দিতে পারি?”

সমন্বয়ক মেহেদী হাসান রনি দাবি করেন, সবুজকে প্রকল্প সম্পর্কিত প্রশ্ন করায় তার সমর্থকরা লাঠি দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সাজেদুল ইসলাম সবুজ তার বক্তব্যে জানান, রৌমারীতে সংগঠনের কোনো কমিটি নেই এবং জেলা আহ্বায়কের নির্দেশেই তিনি কমিটি গঠনের পোস্ট দেন। সবুজ বলেন, “মতবিনিময়ের পর আমরা হোটেল থেকে নাস্তা করে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন রনি আমাদের সঙ্গে থাকা রঞ্জু ইসলাম নামে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আমি প্রতিবাদ করলে তারা আমার ওপর হামলা চালায়।”

ঘটনার প্রসঙ্গে রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন বলেন, “প্রকল্পগুলো ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়। এগুলো তাদের নিজস্ব বিষয়।”

এদিকে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনার পেছনে প্রকল্পের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। সংঘর্ষের রেশ থেমে গেলেও সংগঠনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও নেতৃত্বের বৈধতা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *