চোখ হারানোর যন্ত্রণার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও পুনর্বাসনের অন্ধকার ভবিষ্যতের শঙ্কায় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটলো। রোববার (২৫ মে) দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা জুলাই গণআন্দোলনের চার আহত যোদ্ধা—শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন (আবু তাহের)—সবার সামনেই বিষপান করেন। ঘটনা ঘটার পরপরই তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।
ঘটনার সময় ইনস্টিটিউটে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের (July Shahid Smriti Foundation) সিইও। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান মো. জাহিদ হোসাইন। তিনি জানান, “দুপুরে বিষপানের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারজনকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
প্রশ্ন উঠেছে, তারা ফাউন্ডেশনের সিইও-র সঙ্গে কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন কিনা। এ বিষয়ে জাহিদ হোসাইন বলেন, “এটা সত্যি নয়। আজ রুটিন ভিজিটে গিয়েছিলাম। সিইও স্যার তখন হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলেন। আমাদের যাওয়ার কথা কেউ জানত না। তারা দেখা করতে চাইলেও সবার সঙ্গে যার যার বেডে গিয়ে কথা বলার পরিকল্পনাই ছিল।”
বিষপানের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, “চারজনের মধ্যে একজন বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। দীর্ঘ চিকিৎসা ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর যন্ত্রণা থেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই মানসিক চাপ থেকেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
আহত যোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন, গত ৯ মাসে তাদের উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতির পরেও বাস্তবায়নে অনীহা দেখা গেছে। বহুবার বলা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ফলে তারা দিনদিন হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (National Institute of Ophthalmology and Hospital) পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, “চারজনই বিষপান করেছেন, তবে তারা এখন সুস্থ। আমাদের আজ ফাউন্ডেশনের সিইওর সঙ্গে একটি মিটিং ছিল। সেসময় তারা দেখা করতে এসে কিছু বলার আগেই বিষপান করে ফেলেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে হাসপাতালে থাকা অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা মনে করছেন হাসপাতাল ছেড়ে দিলে পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে যাবে।”
বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ৫৫ জন জুলাই আন্দোলনের আহত যোদ্ধা চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন সুস্থ হলেও হাসপাতাল ছাড়তে নারাজ। কারণ, তারা হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে কিছুটা নিরাপদ অনুভব করছেন।
এদিকে রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের দায়ভার নিয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “যেখানে সরকারের মূল কাজ ছিল শহীদদের তালিকা, বিচার ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ, সেখানে জুলাই আহতদেরই চিকিৎসা এবং পূর্নবাসন নিশ্চিত করতে পারেনি এই সরকার।” কেউ কেউ মনে করেন, সরকার নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই কিছু কিছু ইস্যু ইচ্ছা করে মাঠে রেখে দিয়েছেন, যাতে এইসব ইস্যু গুলো নিয়ে একদিকে যেমন অন্তবর্তী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা যাবে অন্য দিকে, এগুলো নিয়ে কথা বলে, নতুন রাজনৈতিক দল মাঠে জায়গা করতে পারবে, তবে জুলাই নিয়ে এই ধরনের ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না।