সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি, ‘কারণ দর্শাও—নইলে চাকরি খোঁয়াও’ নিয়মে তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিনা বিভাগীয় মামলায় সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্তের বিধান রেখে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ (Government Service [Amendment] Ordinance, 2025) জারি করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (Mohammed Shahabuddin) স্বাক্ষরিত এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’-এর অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই চাকরিচ্যুত করা যাবে। এতে আপিলের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে—রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার রাতে গেজেট আকারে প্রকাশিত এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা, কর্তব্যে অবহেলা, অন্যকে কাজ থেকে বিরত রাখার উসকানি বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধকে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং এসব অপরাধে সরকারি কর্মচারীর নিম্ন পদে অবনমন, বরখাস্ত বা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

অভিযোগ প্রমাণের জন্য বিভাগীয় মামলার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন করে নোটিশ দেবে, এবং সাত কার্যদিবসের মধ্যে সেই নোটিশের জবাব দিতে হবে অভিযুক্তকে। শুনানির সুযোগ থাকলেও সেটি কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল।

নোটিশ যথাযথভাবে পৌঁছানোর সংজ্ঞাও প্রসারিত করা হয়েছে—ই-মেইল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বা সর্বশেষ ঠিকানায় লটকিয়ে দিলে তা যথাযথ ধরা হবে। আপিলের সুযোগ সীমিত করা হলেও রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল করা যাবে না; বরং ‘পুনর্বিবেচনার’ আবেদন করা যাবে, যার চূড়ান্ত রায় দেবেন রাষ্ট্রপতি নিজেই।

এই অধ্যাদেশ জারির খবর সামনে আসতেই সচিবালয়ে শুরু হয় কর্মচারীদের প্রতিবাদ। আজ রবিবার সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা এই আইনকে আখ্যা দিয়েছেন ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ হিসেবে।

বাদিউল কবীর (Badiul Kabir), সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি, বলেন, “সোমবার সকাল ১১টায় সচিবালয়ে আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে। সেখান থেকে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।”

বিক্ষোভকারী কর্মচারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই অধ্যাদেশ বাতিল না করা হলে সচিবালয়ে উপদেষ্টাদের প্রবেশ রোধ করা হবে। তারা বলছেন, সরকার কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের অধ্যাদেশ জারি করে গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী পদক্ষেপ নিয়েছে।

অবস্থার আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে আজ বিকেলে সরকার সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া পর্যালোচনার জন্য ১০ সদস্যের একটি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কমিটিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে।

তবে আন্দোলনকারীদের মতে, “কমিটি গঠন মুখে ঠুলি পরার শামিল।” তাঁদের বক্তব্য, সরকার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ইতোমধ্যে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে, এখন শুধুমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই এই কালাকানুন বাতিল সম্ভব।

সরকারি চাকরিজীবীদের দাবি—কোনো অপরাধ প্রমাণ না হলে কিংবা নিয়মিত বিভাগীয় তদন্ত ছাড়া চাকরি থেকে বরখাস্তের সুযোগ রাখা হলে তা সৎ কর্মচারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তাদের ভাষায়, “কারণ দর্শানোই যদি যথেষ্ট হয়, তাহলে প্রশাসনে শৃঙ্খলার নামে স্বেচ্ছাচারিতা চলবে।” আন্দোলন চলবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত—এমনটাই জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ সরকারি কর্মচারীরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *