ড. ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব উঠেছে—যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে। রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া হলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ আয়োজিত নাগরিক ভাবনা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মো. নাজিমুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন টাইমস ইউনিভার্সিটির বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. মো. জয়নুল আবেদীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসএফ ফরমানুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. আলমগীর অপূর্ব এবং কাজী আমিনুল করিম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সমন্বয়ক মো. সালাহ উদ্দিন কবির।

বিতর্কিত কাঠামোর রূপরেখা

জাতীয় সরকারের সম্ভাব্য কাঠামোর খসড়া উপস্থাপন করে মো. নাজিমুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-কে রাষ্ট্রপতি, ড. বদিউল আলম মজুমদারকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-কে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত-এর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদে রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়।

এই প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নতুন মন্ত্রিসভায় কাউকে পূর্ণমন্ত্রী করা হবে না; সবাই প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রীর পদে থাকবেন। প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে বিএনপি ২৫%, জামায়াত ২০%, এনসিপি ১৫%, ইসলামী আন্দোলন ৫%, বিশেষ ব্যক্তি ১০% এবং অন্যান্য দল ২৫%—এইভাবে শেয়ার ভাগ হবে।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ‘জাতীয় সনদ’

সভায় আলোচকরা বলেন, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ‘অপরিসীম ক্ষমতা’কে হ্রাস করে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং উপ-প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের মাধ্যমে সমতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটি হবে একটি ‘জাতীয় সনদ’—যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রচালনার নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়, এই জাতীয় সনদের মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে, সমন্বিত ও বিকেন্দ্রীকৃত ক্ষমতার কাঠামো গড়ে তোলা হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এই কাঠামো চূড়ান্ত করার আহ্বান জানানো হয়।

‘জনগণই হবে ক্ষমতার উৎস’

বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত জাতীয় সরকার দেশকে কল্যাণমুখী শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিতে পারে, যেখানে জনগণই হবে ক্ষমতার প্রকৃত উৎস। এখানে শাসক নয়, সেবক হিসেবে নেতারা কাজ করবেন—এমন ধারণা তুলে ধরা হয়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি জনমুখী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যও স্পষ্ট করা হয়।

তারা বলেন, অতীতের মতো শুধু রাজনৈতিক এলিটদের নয়, বরং গণঅভ্যুত্থান ও সামাজিক পরিবর্তনে অংশ নেওয়া সব শক্তির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলেই এই সরকার গঠন করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *