রাখাইন করিডর ঘিরে বিতর্ক, মিয়ানমার থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনছে বাংলাদেশ

রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর গঠনের প্রস্তাব ঘিরে যখন দেশের রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড়, ঠিক তখনই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন (Md. Monwar Hossain)-কে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে তাঁকে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকা ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

এই পদক্ষেপ এসেছে এমন এক সময়ে, যখন অন্তবর্তীকালীন সরকার—যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)—তার প্রধান ম্যান্ডেট: বিচার, নির্বাচন ও কাঠামোগত সংস্কারের কাজগুলোর পরিবর্তে একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বলে সমালোচিত হচ্ছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে একটি ‘মানবিক করিডর’ গঠনের প্রস্তাব, যা সরকারের নীতিগত অবস্থান ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, রাখাইনে একটি মানবিক করিডর খোলা মানে পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হতে পারে।

সরকারি কর্মকর্তারা রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি স্বীকার করলেও, তারা এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সংক্ষিপ্তভাবে শুধু বলেছেন, “বিষয়টি স্পর্শকাতর।”

বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমার থেকে রাষ্ট্রদূতকে তলব করার সিদ্ধান্ত একটি শক্ত বার্তা দিতে পারে যে, বাংলাদেশ এই বিতর্কিত করিডর প্রস্তাব থেকে কৌশলে সরে আসতে চায়, অথবা অন্তত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর দায় এড়াতে চায়।

অন্যদিকে, সরকারের সমালোচকরা বলছেন, এই ধরণের সিদ্ধান্ত আসলে আরও এক দৃষ্টান্ত, যেখানে জনগণের স্বার্থ নয়, বরং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হওয়া, নাকি বিতর্কিত কূটনৈতিক প্রকল্পে?

মোটের ওপর, রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেনের ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ রাখাইন পরিস্থিতি এবং করিডর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বিতর্কে এক নতুন মোড় যোগ করেছে। বিষয়টি কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং অন্তবর্তী সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান এবং কার্যক্রমের ওপরও আলো ফেলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *