দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army)। ভবিষ্যতে জনদুর্ভোগ, মব ভায়োলেন্স কিংবা জানমালের ক্ষতি হতে পারে—এমন যেকোনো পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) ঢাকা সেনানিবাস (Dhaka Cantonment) এ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স পরিচালক কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, দেশের ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সমন্বয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সহিংসতা, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বা জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হোক, তা মেনে নেব না। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।”
অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী উদ্ধার করেছে ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬১১টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গুলিতে। একই সময়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীরা।
২০ মে রাজধানীর ভাষানটেকে পরিচালিত এক অভিযানে হিটলু বাবুসহ ১০ জন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা ফিরে এনেছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে দৃঢ়তা
মাদক কারবারের বিরুদ্ধেও সেনাবাহিনী রেখেছে কঠোর নজরদারি। গত ৪০ দিনে ৪৮৭ জন এবং আগস্ট থেকে ৪ হাজার ৪০০ জন মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, মদসহ বিভিন্ন অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা ও ভেজালবিরোধী অভিযান
৫ আগস্টের পর থেকে শিল্পাঞ্চলগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা। যশোর ও সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জেলি মিশ্রিত চিংড়ি ও সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে।
আহতদের সুচিকিৎসা ও ঈদ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনে আহত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন সিএমএইচ (CMH)-এ চিকিৎসা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন।
ঈদুল আজহা (Eid-ul-Azha) উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে সেনাবাহিনী দুই সপ্তাহব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জাতীয় মহাসড়ক, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে টহল ও চেকপোস্ট পরিচালনার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
পশুর হাটে নিরাপত্তা ও চাঁদাবাজি রোধ
ঈদুল আজহাকে ঘিরে পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রায়ই উঠে আসে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনী বিশেষ নজরদারি ও টহল জোরদার করবে যাতে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় এবং হাটে বিশৃঙ্খলা না ছড়ায়।
পার্বত্য ও কক্সবাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনে তৎপর
পার্বত্য চট্টগ্রাম (Chittagong Hill Tracts) অঞ্চলে শান্তি রক্ষা এবং এফডিএমএন ক্যাম্প (FDMN Camp)-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ভূমিকা রেখে চলেছে।
পুরো সংবাদ সম্মেলনে একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করা হয় যে, সেনাবাহিনী জনগণের পাশে থেকে দেশ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় আপসহীন থাকবে এবং যে কোনো চরম পরিস্থিতিতে প্রতিরোধমূলক ভূমিকা নিতে প্রস্তুত রয়েছে।