জামায়াত ও এনসিপিকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান, সরব ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান

জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি এবং ‘রাজাকার আজহারের বেকসুর খালাস’ উদযাপনকে ঘিরে সঙ্গীতশিল্পী ও সামাজিক আন্দোলনের এক সুপরিচিত মুখ, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান (Farzana Wahid Shayan) তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সরাসরি ও প্রখর ভাষায় তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন—তিনি আর কখনোই জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) কিংবা এনসিপি (NCP)-কে ভোট দেবেন না।

এক ফেসবুক পোস্টে সায়ান বলেন, “জামায়াতকে বুকের সাথে আগলে রেখে, রাজাকারের বেকসুর খালাসকে উদযাপন করে আপনারা আমাদের ভোট চান? বিবেকবান স্বাভাবিক সাধারণ মানুষের?” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “একাত্তরের পরে জন্মেছি বলে কি জামায়াত চিনি না? আলবদর চিনি না? বীরাঙ্গনার ব্যাথা বুঝি না?” তার মতে, এই দেশের শিশুরাও আজকাল জানে জামায়াত কারা, তাদের আদর্শ কী, আর তারা কীভাবে এই দেশের মানুষকে দমন করতে চায়।

সায়ান তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন এনসিপি দলটির—যারা নাকি একদিকে নতুন দেশ গড়ার কথা বলে, অথচ ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতকে বুকে টেনে নিচ্ছে। তিনি বলেন, “তাদের আরেকটি সঞ্চয় হলো ‘আওয়ামী-ঘৃণা’। আজকে দেশে অনেক অন্যায় ঘটছে, তাতে তাদের মাথাব্যথা নেই। কিন্তু জামায়াত আর আলবদরকে ভালোবাসায় তারা আগুয়ান। ধন্যবাদ এই স্বচ্ছতার জন্য।”

এই পোস্টে তিনি নিজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনযোগ্যতাও ব্যাখ্যা করেন। “আমি প্রতি মুহূর্তে নিজের রাজনীতিকে পরিবর্তন করার পক্ষে। আজকে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করি না, মাটির প্রশ্নে।” এর মাধ্যমে তিনি বোঝান, রাজনৈতিক সমর্থন তার কাছে স্থির কিছু নয়—বরং এটি সময়ের বাস্তবতা আর নৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল।

তিনি জানান, গত জুলাইয়ে নাহিদদের যেসব সাহসী পদক্ষেপ তিনি সমর্থন করেছিলেন, আজ সেই দলের মধ্যেই তিনি দেখতে পাচ্ছেন এক আত্মঘাতী বিপর্যয়। দলটির বর্তমান কিছু সদস্য আজহারুল ইসলাম (Azharul Islam)-এর বেকসুর খালাস উদযাপন করেছে এবং নাদিরা ইয়াসমিন (Nadira Yasmin)-এর অন্যায্য বদলির বিরুদ্ধে নীরব থেকেছে। এতে তিনি মর্মাহত।

তাই নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সায়ান বলেন, “এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে এটাই আমার আপাতত: রাজনীতি, যে এরপর এই নতুন দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আজকে থেকে বর্জন করলাম।” তার মতে, এই বর্জনই তাকে কিছুটা মানসিক শান্তি দিচ্ছে।

সায়ান তার ফেসবুক পোস্টের শেষাংশে পরিষ্কার ইংরেজিতে লেখেন: “I will never support NCP!”—এই বার্তার মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দেন যে রাজনৈতিক দ্বিধা নয়, বরং আদর্শগত স্বচ্ছতা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

সঙ্গীত, কবিতা ও রাজপথ—সবখানেই নিজের প্রতিবাদী অবস্থান তুলে ধরতে পিছপা হননি সায়ান। তিনি বিভিন্ন সময় ছাত্র আন্দোলন এবং সামগ্রিক অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সরব থেকেছেন। জামায়াত এবং তাদের সমর্থকদের প্রতি তার এই অবস্থানও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *