ছবি বদলিয়ে এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ব্যংকে চাকুরী করা আব্দুল ওয়ারেছ

এক যুগ ধরে পরিচয় জালিয়াতি ও ছবি টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করা এক ব্যক্তির আসল পরিচয় ফাঁস হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) জানিয়েছে, সহকারী পরিচালক পদে ২০১৩ সালে যোগদানকারী মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী আসলে প্রকৃত ব্যক্তি নন। তিনি তার আত্মীয়ের পরীক্ষার ফল ও পরিচয়ে চাকরি নিয়ে বর্তমানে যুগ্ম-পরিচালকের পদে উঠে যান। অবশেষে পুলিশের এক তদন্তে জালিয়াতির তথ্য প্রমাণিত হলে বুধবার তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনায় সহায়তা করার অভিযোগে তার চাচা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহজাহান মিঞাকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আসল মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পেয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত। তিনি কখনোই বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেননি। অথচ, তার পরিচয়ে চাকরি নেয়া ব্যক্তি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে এক যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছিলেন।

রাজশাহী অফিসে কর্মরত থাকলেও বুধবার নিয়োগ বাতিলের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওই ব্যক্তি গা ঢাকা দিয়েছেন। তার মোবাইল ফোন বন্ধ, এমনকি বাসাতেও তিনি ফিরে যাননি। একইভাবে অভিযুক্ত চাচা শাহজাহান মিঞার সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।

ঘটনার সূত্রপাত এক কাকতালীয়ভাবে। প্রকৃত ওয়ারেছ আনসারীর বোনজামাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মী। রাজশাহী অফিসে গিয়ে ‘ওয়ারেছ আনসারী’ নামের নেমপ্লেট দেখে ছবি তুলে পাঠান তাকে। তখনই শুরু হয় সন্দেহ। এরপর একটি মামলার তদন্তে পুলিশ যখন খোঁজ নেয়, বেরিয়ে আসে বিস্ময়কর প্রতারণার চিত্র। ব্যাংকে জমা দেওয়া তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের বিস্তর ফারাক ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জানান, পুলিশের তথ্য যাচাই করে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া এক নারী কর্মকর্তার বাবার সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাকেও অপসারণ করা হয়েছে। সেই ঘটনাতেও শাহজাহান মিঞার নাম উঠে আসে।

এছাড়াও আরও একটি আলোচিত ঘটনা—এক নির্বাহী পরিচালক বয়স বাড়াতে জন্মসনদ টেম্পারিং করেছিলেন। তদন্তে ধরা পড়লেও কোনো শাস্তি হয় না। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই তিন ঘটনার সময়ই গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান (Dr. Atiur Rahman)।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে—২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকে হওয়া প্রতিটি নিয়োগ খতিয়ে দেখা হবে। যদিও অফিস আদেশ এখনো জারি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, “তদন্তের ভিত্তিতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার।”

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার ঘাটতি নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *