চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে দেশের সব রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট দলই আগ্রহী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। জাপানের টোকিওতে আয়োজিত ৩০তম নিক্কেই ফোরামের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। আমি কেবল একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যেই কাজ করছি। গণতন্ত্রের মসৃণ রূপান্তর, জনগণের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।”
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব তিনটি—সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন হবে কিনা, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অগ্রগতির ওপর। “ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে কেবল একটি রাজনৈতিক দল বলছে, সব দল নয়। সরকার জুনের মধ্যেই নির্বাচন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সংস্কারে হড়বড়ানি করতে হবে, কিন্তু টেকসই সংস্কারের জন্য ডিসেম্বরের পর আরও ছয় মাস সময় দরকার,” বলেন তিনি।
ড. ইউনূস স্পষ্ট করেন, “আমি ক্ষমতায় থাকার জন্য এখানে আসিনি। কোনো ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা নয়, বরং একটি নির্বাচিত দলের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতেই এই দায়িত্ব নিয়েছি।”
টোকিওর সম্মেলনে বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গঠিত এই সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা।”
এ সময় আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের মানবিক উদ্যোগ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি আলাদাভাবে তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “শান্তি, আস্থা এবং অন্তর্ভুক্তিই এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মূল চাবিকাঠি হবে। এটা শুধু জিডিপির হিসাব দিয়ে মাপা যাবে না, মানুষের কল্যাণ, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সাহসিকতাও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।”
তরুণদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান—“চাকরির পেছনে না ছুটে, উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটুন।”