গভীর রাতে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় ফারুকের হুমকি, ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নিচ্ছেন বুলবুল?

টান টান উত্তেজনা আর নাটকীয়তার মধ্যেই গভীর রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (National Sports Council) বাতিল করে দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (Bangladesh Cricket Board – BCB) এর পরিচালক ক্যাটাগরিতে নিয়োজিত ফারুক আহমেদ (Faruk Ahmed)-এর মনোনয়ন। দীর্ঘদিনের একজন জাতীয় ক্রিকেটার এবং নির্বাচক ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা ও অভিযোগের পাহাড় গড়েই নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।

এনএসসির সচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিসিবির আট পরিচালক ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানানোর পাশাপাশি বিপিএল সংক্রান্ত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে দোষারোপ উঠে আসায় বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম রক্ষার স্বার্থে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

সরাসরি মন্তব্য না করলেও, প্রজ্ঞাপনটি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফারুক জানান, “আমি এটি দেখেছি। এখনই কিছু বলছি না। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।” তিনি আরও যোগ করেন, “যাই হোক না কেন, সেটি নিয়মের মধ্যেই হতে হবে।”

হঠাৎ বৈঠক, এরপর রাতারাতি সিদ্ধান্ত

বুধবার রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সঙ্গে এক বৈঠকে ডাকা হয় ফারুক আহমেদকে। সেখানে তাকে স্পষ্ট করে জানানো হয়, সরকার তাকে আর বিসিবির সভাপতি হিসেবে রাখতে চায় না। যদিও ফারুকের দাবি, তাকে সরাসরি পদত্যাগ করতে বলা হয়নি। বরং তিনি সরকারকে পাল্টা প্রস্তাব দেন—তিনি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকতে চান, তবে নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

কিন্তু বিকেলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। এরপরেই রাত ১১টার কিছু আগে এনএসসি প্রজ্ঞাপন জারি করে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে।

অনাস্থা, তদন্ত আর ব্যর্থতার চাপ

ফারুকের অপসারণের পেছনে কাজ করেছে বিসিবির অভ্যন্তরীণ চাপ। আট পরিচালক মিলে ৬ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান। সঙ্গে ছিল বিপিএল-সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন, যেখানে বিসিবির সাম্প্রতিক বিপিএল ব্যর্থতার দায় চাপানো হয় তার কাঁধে।

বিসিবির সভাপতি পদ শূন্য হবে কিনা, তা নিয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা না থাকলেও পুরো প্রক্রিয়ার অস্বাভাবিক গতি এবং গোপনীয়তা ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে আইনি অনিশ্চয়তা। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুলবুলের আগমন, সুজনের বিদায়?

এই সংকটের ভেতরেই সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল (Aminul Islam Bulbul)-এর নাম। আইসিসি ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত বুলবুল নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে প্রস্তাব পেলে তিনি তাতে সম্মতি দিয়েছেন এবং আইসিসির কাছ থেকেও ছাড়পত্র পেয়েছেন।

এদিকে বিসিবির বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজনের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতির চিন্তাভাবনা করছে ক্রীড়া প্রশাসন। তার জায়গায় সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিসিবিতে অস্থিরতা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিসিবিতে হঠাৎ করে এই অস্থিরতা স্বাভাবিক নয়। আসন্ন নির্বাচন, বিপিএলের টিকিট বিক্রির গোপন তথ্য ফাঁস, এবং দুদক (Anti-Corruption Commission)-এর সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রভাবশালী কিছু সাবেক ও বর্তমান পরিচালকের নাম উঠে আসায় পুরো ব্যবস্থাপনাতেই চাপ তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, বিসিবিতে এখন চলছে বড়সড় পুনর্গঠনের প্রস্তুতি—যেখানে সরকার নিজেই বোর্ডের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঠিক করতে চাইছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *