সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নে একটি চরম অসচেতনতার ঘটনা রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে। সাপের কামড়ের ভয়াবহতা উপেক্ষা করে মৃত সাপ নিয়ে টিকটকের রিল বানাতে গিয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী কোমায় চলে গিয়েছিল।
পনেরো বছর বয়সী তানিয়া খাতুন, তালম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রাতে ঘরের বাইরে টয়লেটে যাওয়ার সময় একটি গোখরা সাপের কামড়ের শিকার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, সাপটি কামড়ানোর পর তানিয়া বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের হাতে বাঁশের লাঠি দিয়ে সাপটিকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং এরপর সেই মৃত সাপ দিয়েই টিকটকের ভিডিও বানায়।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষক্রিয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অসুস্থ বোধ করলে সে মাকে জানায়, এবং তখনই শুরু হয় পরিবারের দৌড়ঝাঁপ। স্থানীয়ভাবে এক ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে বিষ নামানোর চেষ্টা করেন তানিয়ার বাবা, কিন্তু এতে সময় নষ্ট হয় এবং মেয়েটির অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
পরদিন সকালে তানিয়াকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (Shaheed Ziaur Rahman Medical College Hospital) এ ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তখনই তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান। জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে মৃত সাপের ছবি দেখে সেটি গোখরা প্রজাতির বলে শনাক্ত করা হয় এবং দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়। চিকিৎসকদের তৎপরতায় ধীরে ধীরে কোমা থেকে ফিরতে শুরু করে তানিয়া।
তানিয়ার বাবা আবু তাহের জানান, “সাপের কামড়ের পর আমার মেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল। ডাক্তারদের নিরলস চেষ্টা আর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে হয়তো আমরা মেয়েকে হারাতাম। এখন সে কিছুটা সুস্থ, কিন্তু এখনও চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে।”
চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেছেন, সাপের কামড়কে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে এমন বিষাক্ত প্রজাতির ক্ষেত্রে। তানিয়ার ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেকেই এই ঘটনার মধ্য দিয়ে টিকটকের অন্ধ মোহ ও সচেতনতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।