জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি, বিএনপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের দল আসন ভাগাভাগির কোনও আলোচনায় যায়নি। কিন্তু এই দাবিকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক সূত্র বলছে, এই বক্তব্য ‘নির্জলা মিথ্যা’।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, “সম্প্রতি এক দলের প্রধান এক অনলাইন টকশোতে বলেছেন, এনসিপি পর্দার আড়ালে বিএনপির সঙ্গে সিট নেগোসিয়েশন করেছে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এ ধরনের কোনও আলোচনায় আমরা যাইনি।” তিনি আরও বলেন, “উক্ত রাজনীতিবিদের প্রতি আমাদের সম্মান থাকলেও, তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।”
হাসনাত আরও দাবি করেন, এনসিপি কোনও গোপন আলোচনার অংশ না হয়ে বরং প্রশাসনিক সংস্কার, বিচার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়ে আসছে। “ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বারবার। আমরা চাই এবারের নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্কারসহ সমতাভিত্তিক নির্বাচন অনিবার্য।”
তবে এই বক্তব্যের বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট সূত্র। তাঁরা জানিয়েছেন, এনসিপির কিছু শীর্ষ নেতারা সরাসরি বিএনপি (BNP) নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এমনকি হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বয়ং নাকি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের অফিসে গিয়ে সিট সমঝোতার জন্য অনুরোধ করেন।
সূত্র জানায়, এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল—যার মধ্যে পাটোয়ারী, আখতারসহ ৫-৬ জন ছিলেন—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তাঁদের দাবি ছিল, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করতে চান এবং তার বিনিময়ে এনসিপির জন্য ১০০টি আসন চান। সালাউদ্দিন আহমেদ তখন বলেন, “লিস্ট দেন, আমরা দেখে সিদ্ধান্ত নিই।” এনসিপি প্রতিনিধি দল তখন কোনও প্রস্তুত লিস্ট না এনেও, ৪০-৫০ মিনিট ধরে গুগল সার্চ করে ও ফোনে লোকজনকে কল দিয়ে কেবল ১৩টি আসনের তালিকা করতে পারেন। তাও আবার ভুলভাল: বরিশালের প্রার্থীর নাম সিলেটের আসনে, ময়মনসিংহের প্রার্থীর নাম খুলনার আসনে লেখা হয়।
বিষয়টি আরও হাস্যকর হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, হাসনাত নিজে দাবি করেন কুমিল্লায় একটি আসন। তখন সালাউদ্দিন প্রশ্ন করেন, “এই আসনে কায়কোবাদ যদি স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়ান, আপনি জিতবেন কীভাবে?” এনসিপির জবাব ছিল, “আমাদের যেন জিতে আসতে পারি, সেই গ্যারান্টিও দিতে হবে।”
এই ঘটনার সূত্রে এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “জাতীয় রাজনীতিকে এনসিপি চিলড্রেনস প্লে গ্রাউন্ড বানিয়ে ফেলেছে। পুরনো বন্ধুত্ব ১০০% অটুট রেখে, এখন নিজেরা নতুন ‘ভিক্টিম’ সেজে মিথ্যাচার করছে। এরা এক toxic কালচারের জন্ম দিয়েছে যেখানে মিথ্যা আর বাস্তবতা মিলেমিশে গেছে।”