জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party)—এনসিপি অভিযোগ করেছে, গোয়েন্দা সংস্থার তথাকথিত ‘রেডিমেড’ রিপোর্টকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার রূপ দিয়ে কিছু গণমাধ্যম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এনসিপি।
শনিবার (৩১ মে) এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত এক জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, মানবজমিন, কালবেলা, কালের কণ্ঠ, এনটিভিসহ একাধিক গণমাধ্যম ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ভাবে বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এসব সংবাদকে দলটি ‘ক্লিকবেইট সাংবাদিকতা’ এবং ‘শিকারি সাংবাদিকতা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এগুলো গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের প্রচারযন্ত্রে পরিণত করার বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে।
গণমাধ্যমে যেসব রিপোর্ট এসেছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আতিক মোর্শেদ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরেই এ প্রতিবেদনগুলো তৈরি হয়। তবে এনসিপির দাবি, আতিক এখন নাহিদের অধীনে নন; তিনি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের অধীনে কর্মরত। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও সংবাদগুলোতে এনসিপি আহ্বায়ককে জড়িয়ে উপস্থাপন করায় দলটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তিনি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে ‘নগদ’ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায়। ফলে সেই সময়ের কোনো কর্মকাণ্ডের দায় তাঁর ওপর বর্তায় না। তাঁর ভাষায়, এ ধরনের প্রচার রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর।
এনসিপি আরও বলেছে, গোয়েন্দা রিপোর্টকে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ হিসেবে সাজিয়ে উপস্থাপন সাংবাদিকতার ন্যূনতম মান ও দায়িত্ববোধকে ভেঙে ফেলেছে। দলটির আশঙ্কা, এতে এক-এগারো আমলের মতো ‘ফরমায়েশি রিপোর্টিং’-এর সংস্কৃতি ফিরে আসছে।
এমনকি এনসিপির দাবি, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পরপরই একটি বড় রাজনৈতিক দলের মিডিয়া সেল থেকে পরিকল্পিতভাবে নাহিদ ইসলাম ও এনসিপিকে নিয়ে একের পর এক ‘ফটোকার্ড’ ছড়ানো হয়েছে। এই প্রবণতাকে তারা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর ইঙ্গিত বলেই দেখছে।
বিজ্ঞপ্তিতে দলটি আরও দাবি করে, দেশের গণমাধ্যমে এখনো রাজনৈতিক প্রভাব এবং অলিগার্ক মাফিয়াদের দখলদারিত্ব স্পষ্ট। সম্পাদকীয় স্বাধীনতা যেমন সংকুচিত হচ্ছে, তেমনি গণমাধ্যম মালিকানার বদল ঘটলেও গুণগত পরিবর্তন ঘটেনি। এনসিপি মনে করে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সবশেষে দলটি জানায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে ‘ফ্যাসিবাদী ও দলীয় প্রভাব’ প্রতিহত করতে তারা জনগণের পক্ষে থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।