দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি (Democratic Rights Committee)–এর সদস্য আনু মুহাম্মদ (Anu Muhammad) বলেছেন, দেশে এখন এক নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তির আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ার করেন, এই শক্তির প্রতিক্রিয়াশীল গতিপ্রবাহ গোটা সমাজব্যবস্থার মধ্যে নতুন করে নড়ে উঠেছে, এবং এখনই প্রতিরোধ না গড়লে সামনে আরও দমনমূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Dhaka) রাজু ভাস্কর্যের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট আয়োজিত নাগরিক সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এই সমাবেশটি আয়োজন করা হয় যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)–কে দায়মুক্তি দেওয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রতিবাদে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “দেশবাসী গণ-অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা করেছিল, সেখানে তারা চেয়েছিল একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো, যেখানে থাকবে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা হলো, সরকার যেন নির্লিপ্ত দর্শকের ভূমিকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের বাহিনীকেও হামলা ও নির্যাতনে জড়িত পাওয়া যাচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, নারী, ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক—যে-ই যখন ন্যায্য অধিকার নিয়ে মুখ খোলে, তখনই তাদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়। এবং যারা এই হামলা চালায়, তারা দায়মুক্তির আশ্রয়ে থাকে, কারণ সরকারপ্রধানদের অভ্যন্তরেই রয়েছে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা।
একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে দায়মুক্তি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এ টি এম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালের এক যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের নেতা ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দলিল-প্রমাণভিত্তিক অভিযোগ ছিল। আদালত যদি কোনো কারিগরি কারণে পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে দেয়, তবু তার অপরাধের বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “এই দায়মুক্তির মধ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, এবং তা শহিদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
আনু মুহাম্মদ সতর্ক করে বলেন, বর্তমান জামায়াত-শিবিরের তরুণ সদস্যরা হয়তো ৭১-এ জন্মাননি, তারা সরাসরি অপরাধে যুক্ত নয়। কিন্তু তারা যদি সেই অপরাধমুক্তির রাজনীতি ধারণ করে, তবে তারা দায় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলে প্রচার ভয়ংকর ও মিথ্যাচার। শহিদদের বড় অংশ ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। তাদের হত্যাকারীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ইসলামেরই অবমাননা।”
আলোচনার শেষভাগে আনু মুহাম্মদ সবাইকে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে ও বৈষম্য-নিপীড়নের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানান।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যত দিন যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি থাকবে, তত দিন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে লড়াই চলবে। এই লড়াই-ই গড়ে তুলবে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশের ভিত।”
এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন।