নির্বাচন চাওয়াকে ‘ভারতীয় এজেন্ডা’ বলা বিপজ্জনক রাজনৈতিক প্রবণতা: জোনায়েদ সাকি

নির্বাচনের দাবি করলেই ‘ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন চায়’ বলে অভিযোগ তোলা এক উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জোনায়েদ সাকি (Jonayed Saki)। তাঁর মতে, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলোর সমন্বিত বাস্তবায়ন ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।

রোববার (১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাব (National Press Club)-এ গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম নির্বাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, “নির্বাচন চাওয়া কোনো অপরাধ নয়। অথচ এখন এমন একটি বয়ান তৈরি করা হচ্ছে, যেন নির্বাচনের দাবি করলেই সেটি কোনো বিদেশি এজেন্ডার অংশ। এটি ভয়ঙ্কর ও প্রতিক্রিয়াশীল প্রবণতা।”

তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থায় জনগণ দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। রাজনৈতিক সংস্কার, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক কাঠামো—এই বিষয়গুলো পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তবে এসব সংস্কারের পথে অবিশ্বাস ও দূরত্ব সৃষ্টি হলে তা দেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, “ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে তার ব্যাখ্যা জনগণের সামনে আনতে হবে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সূচি না দিলে সংস্কারের কাজগুলো ঝুলে থাকবে।” তাঁর দাবি, সংস্কারের অনেক বিষয়ে ইতিমধ্যেই ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, আর বাকিগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম (Hasnat Kaiyum) এসময় বলেন, “বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামো অচল হয়ে পড়েছে। এটি পরিবর্তন ছাড়া পথ নেই। এমনকি বিএনপিও তাদের ৩১ দফা দাবিতে একই কথা বলেছে।” তিনি সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে জনগণের মতামত নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন এবং বলেন, “এ জন্য একটি সাংবিধানিক সংস্কার সভার নির্বাচন প্রয়োজন।”

সাইফুল হক (Saiful Haque), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক, কড়া ভাষায় বলেন, “যারা অতীতে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছিলেন, তারা এখন আবারও সেই পুরনো ফ্যাসিবাদের শেকড়ে পানি দিচ্ছেন।” তিনি অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থানপন্থী শক্তিগুলোর ভেতরে ঐক্য ভেঙে পড়েছে এবং এখনকার নেতৃত্ব আগের তুলনায় বেশি বিতর্কিত। তরুণদের একটি অংশ রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, “সংবিধানের মালিক জনগণ, কোনো দল বা ব্যক্তি নয়। সেই মালিকানা জনগণের হাতে ফেরত দিতে হবে।”

মজিবর রহমান মঞ্জু (Mojibur Rahman Manju), এবি পার্টির সভাপতি, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে সমালোচনার তীর ছুড়ে বলেন, “আমরা বিএনপিকে বলেছিলাম, জাতীয় অধিকারের প্রশ্নে ঐক্য গড়তে। সরকার আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেনি, আবার নির্দিষ্ট রোডম্যাপও দিতে পারেনি। আমাদের সামনে যে ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে, তা যেন নষ্ট না হয়।”

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন: জেএসডি (Jatiya Samajtantrik Dal)-র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবং রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নিলু। তারা সবাই রাজনৈতিক সংস্কার এবং নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *