কোনো অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত একজন শিল্পীকে অপমান করা, হাতকড়া পরানো বা রিমান্ডে নেওয়া—এসব আচরণকে অন্যায় ও ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত (Abul Hayat)। শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত অভিনয়শিল্পী সংঘের অভিষেক অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্যরা, পাশাপাশি অনেক অগ্রজ ও অনুজ শিল্পী। বক্তৃতায় আবুল হায়াত বলেন, “আইনি সমস্যা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়া শিল্পীদের হঠাৎ ধরে নিয়ে যাওয়া, রিমান্ডে নেওয়া—এসব ঘটনায় আমাদের সংগঠনের লিগ্যাল কমিটিকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কথা নেই বার্তা নেই, একজন শিল্পীকে যেন এক হাজার আসামির কাতারে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ হত্যার মতো অভিযোগে রিমান্ডে পাঠানো হচ্ছে, অথচ অপরাধ প্রমাণ হয়নি। এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে চলতে পারে না।”
স্মৃতিচারণ করে আবুল হায়াত বলেন, “এই বয়সে এসে প্রায়ই স্মরণ করি আমার গুরুদের—সৈয়দ হাসান ইমাম (Syed Hasan Imam), গোলাম মোস্তফা, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ আলী খান, আবুল খায়ের। তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি, শিখেছি। দৃশ্যের আগে খায়ের ভাই বা হাসান ইমাম বলতেন, ‘এই তুমি এই পাঠ করছ? এসো, রিহার্সাল দাও।’ এখনকার কাউকে কি এভাবে বলা যায়? ভয় হয়—না জানি কী বলে ফেলে, অপমানিত হতে পারি।”
নতুন অভিনয়শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যারা নতুন, তাঁদের বলি—আপনাদের মধ্যে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। যদি ভাবেন, সব শিখে এসেছেন, তাহলে সেটা বড় ভুল। সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। মেকআপরুমে কীভাবে কথা বলতে হয়, তা শিখুন। শুধু আড্ডা দিয়েও অনেক কিছু শেখা যায়।”
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স একপর্যায়ে মিলনমেলায় রূপ নেয়, যেখানে অগ্রজ-অনুজ শিল্পী ও তাঁদের পরিবার একসঙ্গে অংশ নেন। সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ এবং অতিথি শিল্পীরা বিভিন্ন দিক থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি প্রকাশ করেন।
এই অনুষ্ঠান শুধু একটি সংগঠনিক দায়বদ্ধতার পরিচয় নয়, বরং একটি সময়ের আবেগ এবং শিল্পী সমাজের বাস্তবতাও তুলে ধরেছে।