জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহাল: খবর পাকিস্তানের গণমাধ্যমে

বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় পর জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার ঘটনা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রবল আলোড়ন তুলেছে। ১ জুন (রোববার) সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এই ঐতিহাসিক রায় দেয়, যা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

পাকিস্তানের প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিক ডন এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছিল। এরপর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে দলটি এখন সুপ্রিম কোর্টে জয়ী হয়েছে। ডন-এর বিশ্লেষণে এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ‘গুরুত্বপূর্ণ বাঁক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ডন আরও উল্লেখ করে, এই রায় এমন এক সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ (Awami League)-কে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় দেওয়া মৃত্যুদণ্ডও সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছে। পাকিস্তানি মিডিয়ায় এই দুই ঘটনাকে একসঙ্গে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক পটভূমির একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর পাকিস্তানঘেঁষা রাজনৈতিক শিকড় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের বিতর্কিত ভূমিকার কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। সেই সময় দলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থানে ছিল, যা এখনও বাংলাদেশে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো মনে করছে, জামায়াতের রাজনীতিতে পুনরায় প্রবেশ রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা উসকানি, সহায়তা, ষড়যন্ত্রসহ একাধিক মানবতাবিরোধী অভিযোগে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার প্রথম শুনানি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

পাকিস্তানি মিডিয়ায় এই সব ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘উচ্চতর উত্তাপের ইঙ্গিত’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ডনের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে বলছে, এটি কেবল কোনো একটি দলের ফিরে আসার ঘটনা নয়, বরং এটি পুরো অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক কাঠামোতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *