সিনহা মো. রাশেদ খান (Major Sinha Mohammad Rashed Khan) হত্যা মামলায় বহুল আলোচিত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাবেক টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ (Pradeep Kumar Das) ও পুলিশের পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী (Liaqat Ali)-এর বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
রোববার (১ জুন) বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এ এন এম বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। একই সঙ্গে মামলার অন্য ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ও বহাল রাখা হয়েছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রায় চার বছর আগে কক্সবাজারের টেকনাফে সংঘটিত এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপিত হলো।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ওই সময় তিনি ব্যক্তিগত পর্যটন প্রজেক্ট ‘জাস্ট গো’–এর জন্য ভিডিওচিত্র ধারণে কক্সবাজারে ছিলেন। পুলিশের দাবি ছিল, সন্দেহভাজন অবস্থায় তাকে থামতে বলা হলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি মারা যান। কিন্তু ঘটনার পরপরই সেটিকে ‘ফেক এনকাউন্টার’ বা সাজানো বন্দুকযুদ্ধ দাবি করে সামাজিক ও মিডিয়াপ্রতিবাদ শুরু হয়।
পরবর্তীতে সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিন ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় র্যাব। মামলায় বিচারিক আদালত ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামিপক্ষ, আর রায় পুনর্বহালের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
হাইকোর্টের এই রায়ে আবারও প্রতিফলিত হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে করা বিচারিক উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার বিষয়টি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলছে, এটি বাংলাদেশে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ ভাঙার এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
আইনজীবীরা বলছেন, এই রায় কেবল একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নয়—এটি একটি বার্তা, যে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এমনকি তারা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও হন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অবশ্য জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।