সংবিধান সংস্কার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪ ইস্যুতে ঐকমতের কাছাকাছি রাজনৈতিক দলগুলো

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদের নারী আসন, স্থায়ী কমিটি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো ও মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতামত উপস্থাপন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)-এর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনায়। বৈঠকে অধিকাংশ দল এই বিষয়ে কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে।

৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনে সমর্থন

বিভিন্ন দল সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছে। বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami), গণসংহতি আন্দোলনসহ একাধিক দল প্রস্তাব দিয়েছে যে, সংসদ সদস্যরা যেন অর্থ বিল, আস্থাভোট এবং সংবিধান সংশোধন ছাড়া অন্য বিষয়ে নিজস্ব মতামত দিয়ে ভোট দিতে পারেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তার মতো ইস্যুতে দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু দল সীমাবদ্ধতার পক্ষে।

সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সংসদের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দল সংসদের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলের হাতে দেয়ার পক্ষে মত দেয়। স্বরাষ্ট্র, অর্থ, জনপ্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতিও বিরোধী দল থেকে নির্বাচনের প্রস্তাব উঠে আসে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কাঠামো

বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল নির্বাচনের সময়কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার (Caretaker Government) গঠনের পক্ষে একমত হয়েছে। বিএনপি তিন মাস, এনসিপি চার মাস এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি পাঁচ মাসের মেয়াদের সুপারিশ করেছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জাতীয় ও স্থানীয় উভয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা উচিত বলে মত দেয়া হয়।

নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাব

নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে বেশিরভাগ দল সংসদের নিম্নকক্ষে ২৫% নারী আসন নিশ্চিত করার পক্ষে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরাসরি ভোটে ১০০ নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব দেয় এবং ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত জানায়।

রাজনৈতিক দলের বক্তব্য

বিএনপি’র নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আস্থা ভোট, অর্থ বিল ও সংবিধান সংশোধন ব্যতীত অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ থাকা উচিত। জামায়াত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংসদের মৌলিক চারটি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব বিরোধী দলের হাতে দেয়ার বিষয়েও তারা একমত। গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) স্থানীয় সরকার নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার পক্ষে মত দেয় এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা জানায়। ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সংসদীয় কমিটিতে সরকারি ও বিরোধী দল সমন্বিতভাবে চেয়্যারম্যান নিয়োগের প্রস্তাব দেন।

কমিশনের বক্তব্য

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড. আলী রীয়াজ (Ali Riaz)। তিনি বলেন, সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়। যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে, তা জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্য প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।

বৈঠকে অংশ নেয়া ৩০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য দল। আলোচনায় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও, একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *