সূর্যের বাড়তি তেজ ও অস্বাভাবিক কার্যকলাপের ফলে ইলন মাস্ক (Elon Musk)-এর নেতৃত্বাধীন স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো সময়ের আগেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ধ্বংস হচ্ছে—এমনটাই জানিয়েছে নাসা (NASA)। সম্প্রতি সংস্থাটির গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণাপত্রে বিষয়টি প্রকাশ করেছেন, যেখানে সোলার সাইকেল ২৫-এর প্রভাব ঘিরে একাধিক উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্য বর্তমানে তার ১১ বছর মেয়াদি চক্রের সর্বোচ্চ পর্যায়—‘সোলার ম্যাক্সিমাম’-এ রয়েছে। এই পর্যায়ে সূর্য থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা ও সৌরঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ও ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে এবং তারা তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
বিশেষত যেসব স্যাটেলাইট ৩০০ কিলোমিটারের নিচে অবস্থান করে, সেগুলো প্রায় ১০ দিন আগেই পুড়ে যাচ্ছে বলে গবেষকরা জানাচ্ছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্যালকন ৯ রকেট থেকে উৎক্ষেপণ করা ৪৯টি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের বেশিরভাগই এই চাপের কারণে ক্যারিবিয়ান সাগরে পতিত হয়েছিল। সে সময় স্পেসএক্স (SpaceX) এই ঘটনায় একটিকে ‘ছোট ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়’ হিসেবে চিহ্নিত করে দায় স্বীকার করেছিল।
বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে ৭ হাজারেরও বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে এবং স্পেসএক্সের পরিকল্পনা রয়েছে এই সংখ্যা ৩০ হাজারে উন্নীত করার। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, চলমান সৌরচক্রের এ ধরনের পরিবেশগত পরিবর্তন এই মহাকাশ প্রকল্পকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে “ট্র্যাকিং রিএন্টারিং অফ স্টারলিংক স্যাটেলাইটস ডিউরিং দ্য রাইজিং ফেইজ অফ সোলার সাইকেল ২৫” শিরোনামে, যা ‘আরসিভ’ নামক বিজ্ঞান সাময়িকীতে ছাপা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালের আগস্টে, যখন কানাডার একটি খামারে স্টারলিংকের একটি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এই ঘটনা মহাকাশ প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সাধারণত স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যায়, কিন্তু এই অংশটি মাটিতে পৌঁছানোয় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়ে, তবে কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠানোর আগে সৌরচক্র এবং ভূ-চৌম্বকীয় ঝুঁকি নিয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কারণ, শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, মানুষের জীবন ও সম্পদের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।