সন্ধ্যায় জেল থেকে বের হয়ে রাতেই ডাকাতি

জামিনে সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন দুই দুর্ধর্ষ অপরাধী। জামা-কাপড় পাল্টানোরও সময় পাননি তারা। কিন্তু রাত নামতেই আবার ফিরলেন সেই পুরোনো পথে—ডাকাতির অভিযানে। তবে কপাল সুপ্রসন্ন হলো না। পুলিশের চেকপোস্টে ধরা পড়লেন, হাতে থাকা রিভলভার তাক করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে। শেষ রক্ষা হয়নি—অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হলেন তিনজন, যাদের মধ্যে দু’জনই কয়েক ঘণ্টা আগেই জেল থেকে বেরিয়েছিলেন।

আজ বুধবার (৪ জুন) দুপুরে কুমিল্লায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান (Md. Nazir Ahmed Khan)। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিনজন দুর্ধর্ষ ডাকাতকে আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় একটি রিভলভার ও দুই রাউন্ড গুলি।

গ্রেফতার তিনজন হলেন—কুমিল্লা শহরের শ্রীবল্লভপুর এলাকার খোকন মিয়ার ছেলে খাইরুল হাসান (৩০), সদর উপজেলার বাহরূপা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে রাকিবুল হাসান রিয়াদ (২৮) এবং চাঁদপুরের মতলব উত্তরের নয়াকান্দি এলাকার রফিকুল ইসলাম মোল্লার ছেলে সোহাগ মোল্লা (৩৫)। তাদের মধ্যে রিয়াদ ও সোহাগ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান, আর খাইরুল জামিনে বের হয়েছেন এক মাস আগে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই তিনজনই পরিচিত অপরাধী। খাইরুল হাসানের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪০টি মামলা, রিয়াদের নামে ১৬টি এবং সোহাগের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা—সবই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জোরদার তৎপরতার অংশ হিসেবে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়, যার ফলেই তারা হাতেনাতে ধরা পড়ে।

জানা গেছে, কুমিল্লার গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাট targeting করে একটি ডাকাত চক্র গঠন করা হয়েছিল। গরু কেনাবেচা শেষে হাট থেকে বেরোনো ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে টাকার উপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। মঙ্গলবার রাতেই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেরিয়েছিলেন তারা। কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে পদুয়ার বাজারগামী একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠেছিলেন তিনজন। সদর দক্ষিণ থানার ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খাজু মিয়া সন্দেহ হলে থামিয়ে তল্লাশি শুরু করেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তল্লাশির সময় তিন যুবক আচমকা রিভলভার বের করে গুলি চালানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে ঘিরে ফেলে এবং সংঘর্ষ এড়িয়েই কৌশলে তিনজনকেই আটক করে। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে ভয়ঙ্কর ডাকাতির পরিকল্পনার কথা।

তবে এই অভিযানে তাদের সঙ্গে থাকা সিএনজি চালক পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, কুমিল্লায় ঈদকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে নিয়মিত টহল ও চেকপোস্ট চালু রয়েছে। এমন ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, পুলিশি তৎপরতা কতটা জরুরি এবং কার্যকর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *