সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন (Sheikh Bashir Uddin)। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় কোরবানির চামড়ার বাজার ও সংরক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই দাবি করেন।
তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত যে মূল্য— লবণসহ চামড়ার দাম—তা বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে। বর্তমানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে, সেটি লবণ ছাড়া দাম। আর ভালোভাবে সংরক্ষিত চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ দাম বেশি বলে জানান তিনি।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার সঠিক দাম পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “এই অভিযোগ আংশিক সত্য। কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী যাদের সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা নেই, তারা চামড়া অর্ধেক পচিয়ে ফেলছে। সেসব চামড়া ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হওয়া তো বরং বেশি দাম।”
চামড়ার বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে—সে প্রসঙ্গে বশিরউদ্দিন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা স্থানীয়ভাবে মজুত ও লবণ প্রয়োগে উৎসাহিত করার কাজ শুরু করি। এতে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহে সামঞ্জস্য এসেছে।”
তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন চামড়া ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) গঠিত হয়েছে, যা ২৪ ঘণ্টা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লবণযুক্ত চামড়া সরকারের নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছু ভুল ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। উদাহরণ দিয়ে বলেন, “চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক মৌসুমি ব্যবসায়ী ৬২০টি চামড়া সংগ্রহ করলেও তা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় অর্ধেক পচে গেছে। এটা নিয়েই ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন, “অসাধু ব্যবসায়ীরা চামড়ার বাজারে আবারও ধস নামানোর ষড়যন্ত্র করছে। সরকার যথেষ্ট পরিমাণে লবণ সরবরাহ করেছে। কেউ নিজ দায়িত্ব পালন না করে পুরো দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে দিলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।”
চামড়া সংরক্ষণ ও বাজার সক্ষমতা তৈরিতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বশিরউদ্দিন বলেন, “সরকার কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু চামড়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, ২২০ কোটি টাকার প্রণোদনা ছাড় করেছে এবং দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে মসজিদে মসজিদে লবণ সরবরাহ করেছে। এখন প্রয়োজন সবাইকে যুক্ত করা।”
তিনি আরও বলেন, “চামড়ার দাম গতকালের তুলনায় বেড়েছে। আশা করছি, লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য আরও বাড়বে। এখন আমাদের কাছে সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে, দুই-তিন মাস পর্যন্ত চামড়া ধরে রাখা যাবে। তাই সংরক্ষণ করে উপযুক্ত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি না করার পরামর্শ দিচ্ছি।”
এই সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান (Mahbubur Rahman), অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান (Md. Abdur Rahim Khan) এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (Bangladesh Tanners Association) সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ (Md. Shaheen Ahmed)।