ঈদের দিন ভারত পালানো কুরবানির মহিষ ফিরিয়ে আনল বিজিবি, ফিরল মালিকের ঈদের আনন্দও

পবিত্র ঈদুল আজহার সকালে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যাচ্ছিল খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বাগানবাজার এলাকার মো. নাজিম উদ্দিনের জন্য। কুরবানির জন্য কেনা মহিষটি আচমকা ছুটে পালিয়ে যায়, আর সেই ছুটে চলা গিয়ে থামে ভারতের অভ্যন্তরে। আতঙ্কিত পশুটি স্থানীয়দের চোখের সামনে ফেনী নদী পার হয়ে সীমান্ত পিলার ২২১৪/১২-এস অতিক্রম করে চলে যায় ভারতের দিকে।

বিষয়টি চোখে পড়ে বাগানবাজার বিওপি’র কর্মরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB)-এর সদস্যদের। সঙ্গে সঙ্গে বিওপি কমান্ডার ঘটনাটি জানিয়ে দেন রামগড় ব্যাটালিয়নের ৪৩ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আহসান উল ইসলাম-কে। অধিনায়ক ভারতের ১১৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করে মহিষ ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপরতা শুরু করেন।

তবে সেটি সহজ হয়নি। ভারতের সীমান্ত এলাকায় ঘন জঙ্গল এবং রাত নেমে যাওয়ায় শনিবার আর মহিষটি ধরা সম্ভব হয়নি। পরদিন, রোববার সকাল ১১টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা আবার অভিযান চালালে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে—মহিষটি নিজেই আবার ফেনী নদী পার হয়ে সীমান্ত পিলার ২২১৩/এমপি দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ফিরে আসে। বিজিবির তৎপরতা ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় শেষে মহিষটি আটক করা সম্ভব হয়।

সকাল পেরিয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিজিবি মহিষটি তার মালিক মো. নাজিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করে। এই ঘটনায় আবেগাপ্লুত নাজিম বলেন, “বিজিবির সহানুভূতিশীলতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা শুধু আমাদের কুরবানির পশুটি ফিরে পাইনি বরং আমাদের ঈদের আনন্দও ফিরে পেয়েছি। এটি শুধুই পশু ফেরত আনার ঘটনা নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বিজিবির গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন।”

এ প্রসঙ্গে রামগড় ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, “কুরবানি মুসলমানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যখন কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এরকম দুর্ঘটনায় পড়েন, তখন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর উচিত মানবিক দায়িত্ব পালনে পাশে দাঁড়ানো। আমরা বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে এই উদাহরণটি স্থাপন করতে পেরেছি।”

অবশেষে, ফিরে পাওয়া মহিষটিকেই আজ কুরবানি দেন নাজিম উদ্দিন। মহিষের ফিরে আসা যেন শুধু পশু ফেরতের গল্প নয়, বরং সীমান্তের দুই দেশের বাহিনীর সম্মিলিত মানবিকতা ও ধর্মীয় সহমর্মিতার এক গভীর বার্তা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *