ক্ষমতার অপব্যবহার, টাকা পাচার এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পদ আঁকড়ে থাকার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) চাচা শেখ কবির হোসেন (Sheikh Kabir Hossain) রোববার সকালে দেশ ছেড়েছেন। জানা গেছে, তিনি সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইটে করে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।
এই বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)–এর ইমিগ্রেশন বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শেখ কবির রোববার সকালে দেশের বাইরে গেছেন। তবে তার বিদেশযাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল কি না—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
শারীরিকভাবে অক্ষম, অথচ ২৩ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে
৮২ বছর বয়সী শেখ কবির হোসেন, যিনি শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman)-এর চাচাতো ভাই এবং সে সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ও বেসরকারি অন্তত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে আসীন ছিলেন। শারীরিকভাবে চলাফেরায় অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও, তার ক্ষমতার বলয়ে বহু প্রতিষ্ঠানেই তিনি পদ আঁকড়ে ছিলেন।
শুধু পদে বসেই তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন এমন নয়—বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মিটিংয়েও অংশগ্রহণ করতে পারেননি নিয়মিত। কিন্তু তার পরিচয় ব্যবহার করে কিংবা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে এক শ্রেণির লোক সরকারি সুবিধা ভোগ করেছে। এমনকি বেশ কিছু কোম্পানি দখলের পর তাকে ‘ফ্রন্ট’ হিসেবে সামনে রাখা হতো বলেও জানা যায়।
পদগুলো কাদের নিয়ে, আর কোথায় প্রভাব
জানা যায়, তিনি ছিলেন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-এর চেয়ারম্যান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল টি কোম্পানির চেয়ারম্যান, কাবিকো লিমিটেড ও কাবিকো ফুড লিমিটেড অ্যান্ড মাসুদা ডায়েরি নিউট্রিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং হোটেল লা মেরিডিয়ান পরিচালনাকারী বেস্ট হোল্ডিংয়ের স্বতন্ত্র পরিচালক।
তাছাড়া, তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান, ইসলামী আই হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য এবং খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
সরকার পতনের পর পদত্যাগ
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকেই পদত্যাগ করেন শেখ কবির হোসেন। তবে তখনও অনেক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে তিনি কার্যত নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিলেন বলে সূত্র জানায়।
তিনি গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন, যা তার নিয়োগ ও প্রতিষ্ঠানে আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হয়।
আলোচিত এই প্রস্থানে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই কেন এবং কীভাবে তিনি বিদেশে চলে গেলেন। প্রশ্ন উঠছে, একজন বিতর্কিত প্রভাবশালী ব্যক্তি কীভাবে কোনো বাধা ছাড়াই দেশত্যাগ করতে পারলেন।