সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (Abdul Hamid)–এর দেশে ফেরা ঘিরে ফের শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে সরকার তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (Lt. Gen. (Retd.) Md. Jahangir Alam Chowdhury) জানিয়েছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকায় তাঁকে আটক করা হয়নি।
সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্ট না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাঁর বিরুদ্ধেও অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সরকার চায় না কোনো নির্দোষ ব্যক্তি শাস্তি পাক। তাই প্রতিটি মামলা গভীরভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার তদন্তও চলমান বলে জানান তিনি।
রবিবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৩৯ ফ্লাইটে চিকিৎসা শেষে ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন আবদুল হামিদ। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, তিনি হুইলচেয়ারে আসেন, বিধ্বস্ত চেহারায় ছিলেন, পরনে ছিল সাধারণ শার্ট ও লুঙ্গি। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ডা. নৌশাদ খান।
এর আগে তাঁর দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আজহারুল ইসলাম এবং এসবির এটিএসআই মো. সোলায়মানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ১০ মে, গণ-আন্দোলনের চাপের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখার ঘোষণা দেয়। তার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সবুজ সংকেত পেয়েই তিনি দেশ ছেড়েছিলেন, কিন্তু সেই দেশত্যাগের ঘটনাটিকে ব্যবহার করা হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার অজুহাত হিসেবে। এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে সরকারের মদদপুষ্ট একটি দল, এনসিপি-কে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (Hazrat Shahjalal International Airport) নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ গণমাধ্যমকে জানান, আবদুল হামিদ সাধারণ যাত্রীর মতোই দেশে ফেরেন, কোনো প্রটোকল চাননি।
দেশে ফেরার পর রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন আবদুল হামিদ এবং রাত ৩টার কিছু আগে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়, যেখানে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy), সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed Putul), এবং ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader)–এর নামও রয়েছে। সেই মামলার পরও আবদুল হামিদ ৮ মে গভীর রাতে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করেন। এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।
২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন এবং পরবর্তীতে পূর্ণ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান।